ধীমান রায়, কাটোয়া: স্কুল নয়, বরং এ রাজ্যের অমুসলিম পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ পড়াশোনা করছে মাদ্রাসায়! চলতি বছরে ওয়েস্ট বেঙ্গল হাই মাদ্রাসার পরীক্ষায় ফলে অন্তত তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবছর যারা হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় বসেছিল, তাদের মধ্যে ১১.৯ শতাংশই ইসলাম ধর্মালম্বী নয়।
এ বছরের ফ্রেরুয়ারি মাসে হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনটি পরীক্ষারই ফলপ্রকাশ করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ মাদ্রাসা এডুকেশন। হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম মুর্শিদাবাদের সাইনূল হক। জেলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে তিনজন ছাত্রী। তারা কেউই কিন্তু ইসলাম ধর্মালম্বী নয়। অন্যদিকে মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায় বসেছিল ৮ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষা। আর ফাজিল পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৭৯ জন। আলিমের প্রথম স্থান অধিকারী করেছে উত্তর ২৪ পরগনার শেখ ওয়াসিমাউদ্দিন আর ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম হুগলির শেখ হাবিবুল্লাহ।
চিরাচরিত রীতি মেনে ফাজিল ও আলিম পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছে মুসলিম পড়ুয়ারাই। কিন্তু, হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় তিনজন অমুসলিম পড়ুয়ার সাফল্য নজর কেড়েছে। মাদ্রাসায় শুধু ইসলাম ধর্মের ছেলেমেয়েরাই পড়াশোনা করে, এই ধারণা ভেঙে দিয়েছে আগরডাঙ্গা হাই মাদ্রাসার অর্পিতা সাহা, সাথী মোদক ও পিউপিয়া সাহা।
কিন্তু স্কুল ছেড়ে কেন মাদ্রাসায় ভরতি হচ্ছে অমুসলিম পড়ুয়ারা? ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ মাদ্রাসা এডুকেশনে সভাপতি আবু তাহেরের ব্যাখা, ‘গত কয়েক বছরে রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিতে পঠনপাঠনের মান আগের তুলনায় যেমন ভাল হয়েছে, তেমনি মেধাবী পড়ুয়ারা বৃত্তি বা স্কলারশিপও পাচ্ছে। তাই বীরভূম, পূর্ব মেদিনী ও বাঁকুড়ার মতো জেলায় অমুসলিম পড়ুয়ারাও মাদ্রাসায় ভরতি হতে চাইছে।’ শুধু তাই নয়, মাদ্রাসায় ২৯ শতাংশের বেশি শিক্ষকপদে অমুসলিমরাই চাকরি করছেন বলে জানা গিয়েছে।
আগরডাঙ্গা হাই মাদ্রাসায় শিক্ষক অতনু গোস্বামী বলেন,‘‘আমাদের মাদ্রাসায় প্রায় ৬০ শতাংশই অমুসলিম পড়ুয়া। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের নিবিড় সম্পর্ক। স্থানীয় গ্রামবাসীরাও বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।” প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, এবছর তাঁদের মাদ্রাসা থেকে ৬২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৫জনই ছাত্রী। পাশ করেছেন মোট ৫৪ জন।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.