ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: লাগাতার বনধে নারাজ সঙ্গীরা। কিন্তু ভাঙবে তবুও মচকাবে না গুরুংরা। তাই জিএনএলএফ, জাপ-এর মতো সঙ্গী দলগুলির আপত্তি সত্ত্বেও বনধের পথে অনড় মোর্চা। পাহাড়ে নতুন করে অশান্তি ছড়াতে তৎপর গুরংয়ের দল। এবার সরাসরি হামলা চালানো হল পুলিশের উপর। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিস্তা ভ্যালিতে পুলিশের টহলরত জিপের উপর হামলা চালায় মোর্চা সমর্থকরা। ঘটনায় এক সিআরপিএফ জওয়ান-সহ ৪ পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।
গতকাল রাতে হামলা চালানো হয় রংলি রংলিয়ট থানার পুলিশ আউট পোস্টের কাছে। এলাকায় তখন টহল দিচ্ছিল পুলিশের দু’টি জিপ। ভ্যালির কাছে লুকিয়ে ছিল কিছু মোর্চা সমর্থক। আচমকা পাথর, কুকরি নিয়ে পুলিশ ও নিরপত্তাকর্মীদের উপর হামলা চালায় তারা। জিপটিও ভাঙচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আহত হলেও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান পুলিশকর্মীরা। পরে তাঁদের উদ্ধার করে সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।
[ছাত্রীদের আবেদনে সাড়া মুখ্যমন্ত্রীর, এবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়েও ‘কন্যাশ্রী’]
এদিকে পাহাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মিরিকেও হামলা চালায় মোর্চা সমর্থকরা। রাত একটা নাগাদ মিরিক মিউনিসিপালিটির ভাইস চেয়ারম্যান এম কে জিম্বার বাড়িতে পেট্রল বোমা ছোড়া হয়। আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। বাঁচার জন্য জিম্বা বাড়ির বাইরে এলে তাঁর উপরে চড়াও হয় মোর্চা সমর্থকরা। মাথায় চোট পান জিম্বা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। ছাড়া পেয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন জিম্বা। রাতেই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় টুং-এর পঞ্চায়েত অফিসে। দীলারাম পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার গৈরিগাঁও পঞ্চায়েত অফিসও পুড়িয়ে দেয় মোর্চা।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই কালিঝোড়ার কাছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে মোর্চা সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন ট্রাকচালক অনিকেত ছেত্রী। গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর। হাসপাতালে যখন অনিকেতকে ভর্তি করা হয়েছিল নব্বই শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তাঁর শরীরের। চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল শহরের এসএসকেএম হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। শুক্রবার সকালে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
লাগাতার বনধ, অশান্তির জেরে চিন্তার ভাজ পড়েছে চা বাগানে মালিকদের কপালে। দার্জিলিং টি ইন্ডাস্ট্রির পেশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী, গত তিন সপ্তাহে চা পাতা না তুলতে পারায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এখন সেকেন্ড ফ্লাশের চা তোলার সময়। যা বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। কিন্তু তা তোলা না যাওয়ায় দেড়শো কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে গত কয়েক সপ্তাহে। অনেক বাগানের মালিক নাকি এস্টেট বন্ধ করে দেওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন। এর প্রভাব চা বাগানের কর্মীদের আর্থিক পরিস্থিতিতেও পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
[ক্যানসারেও ভুয়ো চিকিৎসক! লেকটাউনে জালে ঠগবাজ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.