তরুণকান্তি দাস: অধিকাংশ স্কুলের গরমের ছুটি শেষ হতে আর হপ্তাখানেক বাকি৷ তার আগেই অশান্ত পাহাড়৷ মহালয়ার তর্পণ সেরে ফেলা মানেই বাঙালির তর সয় না এনজেপিগামী ট্রেনের কামরায় পা রাখতে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার বারবেলায় মোর্চা-তাণ্ডবের পর সেই পাহাড়রানির পর্যটন যেন কুয়াশাঘেরা৷ এদিনই অনেকে ট্রেনের টিকিট বাতিল করেছেন৷ যাঁরা একটু সাহসী, তাঁরা নিউ জলপাইগুড়ি নেমে আর যা-ই হোক মিরিক, দার্জিলিং বা কালিম্পং যাবেন না৷ কেউ ছুটবেন ডুয়ার্স৷ কেউ উঠবেন সিকিমগামী জিপে৷
এদিন পাহাড়ের অগ্নিগর্ভ অবস্থা মোকাবিলা করতে দুই কোম্পানি সেনা নামানো হয়৷ প্রতি কোম্পানিতে রয়েছে ৪০ জন সেনা৷ আগামিকাল পাহাড়ে বনধ ডেকেছে মোর্চা৷ তা কড়া হাতে মোকাবিলা করতে চলেছে প্রশাসন৷ এদিকে ইতিমধ্যেই পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের দফায় দফায় সমতলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই মোর্চা তান্ডবে আতঙ্কিত পর্যটকরা. আর তাতেই ধস নেমেছে সামগ্রিক পর্যটন চিত্রে৷
বেড়ানোর নামে পাগল বাঙালি কি হঠাত্ জ্বলে ওঠা দার্জিলিং ম্যালের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবেন পুজো পর্যন্ত? মনে হয় না৷ বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা জানাচ্ছে, এখনই এ নিয়ে কিছু বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে৷ এর আগেও যে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তা নয়৷ অতীতেও দেখা গিয়েছে, পুজোর মরশুমে পাহাড় শান্ত হয়ে যায়৷ আশা, এবারও তাই হবে৷ এবং পুজোর সময়ে ভিড় উপচে পড়বে ম্যাল বা মিরিক লেক চত্বরে৷ পর্যটন যে অর্থনীতির জীবনরেখা, তা নষ্ট করার মতো বোকামো মোর্চা নেতৃত্ব করবে না বলেই মনে করছে পর্যটনশিল্প মহল৷ ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড টুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, “এখনও পুজোর দেরি রয়েছে৷ ততদিনে কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনই বলা মুশকিল৷ তবে এটা বলা যায়, পুজোয় বাঙালি হয়তো আসবেন কিন্তু ভিন রাজ্য ও ভিনদেশিদের মধ্যে কিছুটা হলেও বিরূপ প্রভাব পড়বে৷”
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর যে সব পর্যটক শিলিগুড়িতে পা রেখেছেন তাঁরা আর পাহাড়মুখো হননি৷ তাঁরা গেলেন কোথায়? গরমকালে ডুয়ার্সে পর্যটকদের চাপ কম থাকে৷ হোটেলে ঘর মেলে সহজে৷ তাই বিভিন্ন সংস্থা পর্যটকদের পাঠিয়ে দিয়েছেন হোম স্টে, গরুবাথান, জলদাপাড়া-সহ নানা এলাকায়৷ কিন্তু পুজোর সময় তো সেই সুযোগ থাকবে না৷ তখন এই আগুন জ্বললে কী হবে তা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ সকলের৷ ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের প্রাক্তন সভাপতি প্রবীর সিংহ রায়ের বক্তব্য, “আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত ছিল এই গরমে পাহাড়ে পর্যটনের সময়৷ বৃহস্পতিবার বিকেলের পর প্রায় ৩০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে৷ শুধু দার্জিলিং তো নয়, সিকিমও ধাক্কা খাবে৷ কেন না দার্জিলিং বা কালিম্পং হয়ে
সিকিমের পেলিং বা গ্যাংটক যাওয়ার সূচি তৈরি করেন অনেকে৷ সবই বাতিল৷” পুজোর সময় কী হবে? প্রবীরবাবুর মন্তব্য, “কিছুদিন না গেলে বলা যাবে না পুজোর সময় বাঙালি এনজেপি নেমে দার্জিলিং-কার্শিয়াং যাবেন নাকি ডুয়ার্স, সিকিম বা ভুটানমুখী হবেন৷”
শনিবার থেকে বাস যাত্রী কমার আশঙ্কা রয়েছে৷ ট্রেনের কী হাল? বিকেলের পর থেকেই দার্জিলিং মেল, পদাতিক-সহ কয়েকটি ট্রেনের রিজার্ভেশন উল্লেখযোগ্যভাবে বাতিল হয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.