ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: মোর্চার ডাকে অনির্দিষ্টকালের বনধ। সকাল যদি বাকি দিনের ইঙ্গিত হয় তা হল বোঝা গেল বনধের গেরো থেকে বেরোতে চাইছেন পাহাড়বাসী। অফিসে ভাঙচুর, আগুন লাগিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হয়েছে। পিকেটিংও হয়েছে। তারপরও সরকারি কর্মীরা অফিসে গিয়েছেন। দিব্যি কাজ করেছেন। পরীক্ষার প্রথম দিনে এই আবহাওয়া টের পেয়ে মোর্চা নেতৃত্ব অন্য সুর গাইতে শুরু করল। গোর্খাল্যান্ড নিয়ে কেন্দ্রের দিকে বল ঠেলে আপাতত কর্মীদের সামলাচ্ছে মোর্চা।
[অন্যায় আবদার মানব না, ভাঙড়ে হুঁশিয়ারি মমতার]
হুঁশিয়ারি, হুঙ্কার। অনেক কিছুই ছিল। তার প্রতিরোধের ব্যবস্থাও ছিল। দিনের শেষে দেখা গেল পাহাড়ে প্রশাসনকে অচল করে দেওয়ার বার্তায় তেমন কাজ হয়নি। সরকারি কাজকর্ম স্তব্ধ করতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কম তৎপর ছিল না। সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের বনধের কথা বললেও, রবিবার রাত থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছিল মোর্চা। ওই দিন রাতে পুলবাজারে বিডিও অফিসে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। গ্রেপ্তার করা হয় ৩ মোর্চা সমর্থককে। সোমবার দুপুরে দার্জিলিংয়ের লেবং কার্ট রোডে মোর্চা সমর্থকরা তাণ্ডব চালায়। পূর্ত দপ্তরের স্টাফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মোর্চা সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ওই অফিসে থাকা ক্যান্টিন কর্মীরা প্রাথমিক ভাবে আগুন নেভান। পরে দমকেলর একটি ইঞ্জিন আগুন আয়ত্তে আনে। এদিন সোনাদায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অফিসেও ভাঙচুর চালায় তারা। সুকমা পঞ্চায়েত অফিস মোর্চা জোর করে বন্ধ করে দিলেও পুলিশ পরে খুলে দেয়। গরুবাথান পঞ্চায়েত অফিসেও তালা মারার চেষ্টা করে মোর্চা সমর্থকরা। এত কাণ্ডের পরও রোশন গিরি দাবি করেছেন, এইসব ঘটনায় তাদের যোগ নেই। বদনাম করতে এমন করা হচ্ছে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, পাহাড় অচল করতে চাইলে কয়েক হাজার সমর্থককে নামাতে পারতেন। অদ্ভুতভাবে বনধের সাফল্যও দাবি করেনি মোর্চা। যা বেনজির। এমনকী বিমল গুরুংকেও সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। দিনভর পাতলেবাসেই বন্দি ছিলেন মোর্চা সভাপতি। সরকারি দপ্তরগুলি অচল করে দেওয়ার চেষ্টা হলেও তেমন যে সুবিধা হয়নি, তা বুঝতে পেরে মোর্চা জানিয়েছে এই ইস্যু নিয়ে তারা কেন্দ্রের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে।
মোর্চার সুর ক্রমশ নরম হওয়ার পিছনে রয়েছে প্রশাসনের সক্রিয়তা। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক জয়শী দাশগুপ্ত সাড়ে নটায় অফিসে পৌঁছে যান। পাহাড়ের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন আইপিএসের সঙ্গে এদিন জেলাশাসকের বৈঠক করেন। মিরিক পুরসভার চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর রাইও সময়মতো পুরসভায় চলে যান। দিনভর কাজ হয়। কার্শিয়ংয়ের এসডিও দেবাশিস চক্রবর্তীকেও অফিসে দেখা যায়। ব্যাঙ্কের কাজকর্ম ছিল অন্য দিনের মতো। কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে সর্বত্র ছিল পুলিশ প্রহরা। পাহাড়ে আরও ৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে। যাদের গোর্খা রঙ্গমঞ্চে রাখা হবে। তবে এদিন টয়ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ পর্যটকরা। প্রশাসনের আশ্বাস পাওয়ার পরও যারা দার্জিলিংয়ে রয়েছেন তার বিরক্ত। তবে হিমালয়ান রেলের তরফে জানানো হয়েছে যাদের বুকিং বাতিল হয়েছে, তারা টাকা ফেরত পাবেন। সব মিলিয়ে পাহাড় জুড়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তির চেষ্টা হলেও অনির্দিষ্টকাল বনধের প্রথম দিনে স্পষ্ট বনধের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে চাইছেন পাহাড়বাসী। ধীরে হলেও এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে পাহাড় জুড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.