চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: পাঁচ বছর আগেও তিনি ছিলেন। তবে এখানে নয়। এভাবেও নয়। রুপোলি পর্দায় তাঁর লড়াই এখনও জীবন্ত। ব্যক্তিত্ব, ক্যারিশমায় মন জয় করেছিলেন আপামর জনতার। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতির ধারে কাছে আসেননি কখনও। সেই তিনিই এবার মেয়ের ভোটপ্রচারে নেমে এলেন আসানসোলের অলিগলিতে।
শনিবার থেকে দ্বিতীয় দফার প্রচার শুরু করতে চলেছেন তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন। মেয়ের সঙ্গে শহর জুড়ে থাকবেন তিনিও। কোথাও ‘আঁধি’র আরতি, কোথাও ‘মমতা’র দেবযানী, ‘সরহদ’-এর নীরজা, অথবা ‘দেবদাস’-এর পারো হয়ে। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়, মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। তাঁকে নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে পাড়ায় পাড়ায়, বাড়িতে বাড়িতে। মুনমুনের মধ্যে তাঁর মাকে খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে প্রবীণরা। সিঁড়ি দিয়ে নামার ভঙ্গিটা ঠিক আঁধির আরতির মতো। মাথায় কালো চুলে এক টুকরো সাদার ছোঁয়া নেই মুনমুনের মাথায়। তাতে মিল খুঁজে নিতে আটকাচ্ছে না কারও। সেই হাসি, বসার ভঙ্গি, কথা বলা-অনেকটাই একরকম। নস্টালজিয়ায় ভাসছে শহর।
এটাকেই উসকে দিতে চাইছেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। পাঁচ বছর আগের মতো এবারেও মুনমুন সেনকে প্রচারে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমি সুচিত্রা সেনের মেয়ে। আসানসোলে এসেও মায়ের আশীর্বাদ ও উপস্থিতি অনুভব করছি।” তখনই ঠিক হয়েছিল, এবার আরও বেশি করে নিয়ে আসতে হবে মহানায়িকাকে। মুনমুন সেনের সম্মতি নিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের নির্দেশে তৈরি হয়েছে অভিনব সব ব্যানার, হোর্ডিং। জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা প্রায় আড়াই লাখ। উত্তর ফাল্গুনীর মতো বাংলা ছবি তো আছেই, আছে দিলীপ কুমারের সঙ্গে প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘দেবদাস’, দেব আনন্দের সঙ্গে ‘সরহদ’, ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে ‘মমতা’, সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে ‘আঁধি’-র সুচিত্রা সেন। হিন্দি ছবিতে মহানায়িকাকে রাখা হয়েছে আসানসোলের হিন্দিভাষী ভোটারদের কথা মাথায় রেখে।
বার্নপুরের তৃণমূল নেতা উৎপল সেন বলেন, ‘‘মুনমুন সেনের নাম নিলেই সুচিত্রা সেনের কথা মানুষের মনে চলে আসে। সুচিত্রা সেন বাঙালির মননে স্বপনে আজও আছেন। আগামী দিনেও থাকবেন। এখন যাঁদের বয়স ৪৫ বছর, তাঁরা আরও বেশি নস্টালজিক হয়ে উঠছেন। মানুষের মনের সেই ভাবাবেগটাকেই আমরা আরও বেশি করে জাগিয়ে তুলতে চাইছি। মনে করিয়ে দিতে চাইছি ভোটপ্রার্থী মুনমুন সেন সুচিত্রা সেনের মেয়ে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মহানায়িকার ছবি দেখে মানুষ সাড়া দিচ্ছে। ভোটের আবহে এপ্রিল মাসে সুচিত্রা সেনের জন্মদিন। বিশেষ দিনটি ঘটা করে পালন হবে৷’’
প্রসঙ্গত ২০১৪-য় বাঁকুড়াতেও ভোটপ্রচারে মুনমুনের সমর্থনে হওয়া নানা সভা-মঞ্চে সুচিত্রা সেনের ছবি দেখা যেত। তবে এভাবে নয়। তৃণমূলের এই প্রচার-কৌশল কানে যেতেই কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বলেন, “বাংলা চলচিত্রকে দেশের কাছে তুলে ধরেছেন সুচিত্রা সেন। তাঁর মেয়ে মুনমুন সেন তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু আপামর বাঙালির হৃদয়ে যে মহানায়িকা রয়েছেন, তাঁকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়।”
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.