ফাইল ছবি।
রিংকি দাস ভট্টাচার্য: সেই মে মাস। সেই ভোটের মরশুম। সেই বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু দশ বছর আগের যে ঝড় পরবর্তী কয়েক মাসের জন্য মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল, এবার কি তারও পুনরাবৃত্তি হবে?
২০০৯ এর ২৫ মে। ঘূর্ণিঝড় ‘আয়লা’ তার বিধ্বংসী রূপ নিয়ে আছড়ে পড়েছিল দক্ষিণবঙ্গে৷ পিছু পিছু আসা মৌসুমি বায়ুর যাবতীয় শক্তি শুষে নিয়ে চলে গিয়েছিল। পরিণামে সেবার আসল বর্ষাকাল পারতপক্ষে শুখা যায়। সে মরশুমে কলকাতায় বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ২২ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে চাষবাস ব্যাপক মার খায়। নেমে যায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর। দশ বছর আগে সেই মে মাসেই করাল চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, এবছরও বর্ষার আগমনে প্রভাব ফেলতে পারে ‘ফণী’।
আবহাওয়াবিদ সুজীব কর জানিয়েছেন, চলতি বছর বঙ্গোপসাগরের জলতলের তাপমাত্রা প্রচন্ড বেশি৷ মৌসুমি বায়ু নয়, এমন ঘূর্ণিঝড়ের মধ্য দিয়েই এ বছর বৃষ্টি পাবে বঙ্গোপসাগরীয় এলাকা। তাঁর কথায়, সাধারণত নিম্নচাপ থাকে ভূমিভাগে। উচ্চচাপের অবস্থান হয় জলে। ফলে উচ্চচাপের বায়ু নিম্নচাপ অর্থাৎ জল থেকে বায়ু আসে ভূমিভাগের দিকে। সেইভাগে মৌসুমি বায়ু ঢোকে বঙ্গে। কিন্তু এ বছর বঙ্গোপসাগরেই অবস্থান করছে নিম্নচাপ। ফলে জলের বাতাস স্থলে ঢুকতে পারছে না। জলের উপর থেকে যা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। প্রসঙ্গত, ফণী যেখানে ছিল, সেখানে সাগরে জলতলের তাপমাত্রা ৩০-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা প্রয়োজনের (২৬.৫ ডিগ্রি) তুলনায় অনেকটাই বেশি। ফলে জ্বালানি পেয়ে দফায় দফায় শক্তি বাড়িয়েছে ফণী। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ফের বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে বলেও আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাওয়া অফিসের এক কর্তা শুক্রবার বলেন, “ভারত মহাসাগর অঞ্চলে বর্ষার আগে ও পরে, দু’বার ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম। প্রথমটা মূলত মে মাসে শুরু হয়। ওই সময় দেখা গিয়েছে, এপ্রিলের সৃষ্ট হওয়া বেশির ভাগ ঘূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশ, মায়ানমারের দিকে গিয়েছে। আবার নভেম্বর, ডিসেম্বরের বেশিরভাগ ঝড়ই যায় অন্ধ্রপ্রদেশ-তামিলনাড়ুর দিকে। নানা বিষয় এই গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে।” কিন্তু নথি ঘেঁটে আলিপুর হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, ১৯৬৬ সালের পর এই প্রথম ভারতের উপকূলে হাজির হল এপ্রিল-জাত কোনও ঘূর্ণিঝড়। প্রসঙ্গত, ২৬ এপ্রিল সাগরে জন্ম হয় ‘ফণী’র। জলভাগে টানা ৯ দিন অবস্থান করে দফায় দফায় শক্তি বাড়িয়ে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় সে।
বস্তুত, গত বছর বর্ষার আগে ও পরে, দুই মরশুম মিলিয়ে ৬টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে। এক বছরে এতগুলি ঘূর্ণিঝড় শেষবার হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ২০১৮ সালের মে মাসে দু’টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, ‘সাগর’ ও ‘মেকুনু’। দু’টিরই জন্ম আরব সাগরে। সেপ্টেম্বরের শেষাশেষি ওড়িশায় আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘দয়া’। অক্টোবরে একেবারে একই সময়ে দুই সাগরে প্রতাপ দেখিয়েছে দুই ঘূর্ণিঝড় ‘লুবন’ ও ‘তিতলি’। ষষ্ঠটি ‘গজ’, যা হাজির হয়েছিল নভেম্বরে।
হাওয়া অফিসের এক অধিকর্তার কথায়, “জলবায়ু পরিবর্তন না-বলে জলবায়ুর তারতম্য বলা যেতে পারে।” আসলে চলতি বছর ঘূর্ণিঝড় জন্মানোর পরিস্থিতি অনেকটাই অনুকূল। প্রথমত, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রের জলতলের তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি থাকা প্রয়োজন। সেখানে সাগরে জলতলের তাপমাত্রা এই মুহূর্তে ৩০-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই ফণী পরবর্তী সময়ে বর্ষার আগমনে ফের বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কাই বেশি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.