চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: দু’মাস ধরে ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দু’মাস ধরে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালেও অবশেষে গব্বর ধরা পড়ল রবিবার। স্বস্তি পেলেন জামুড়িয়ার জোরজোনাকি গ্রামের মানুষ। এই গব্বর রামগড়ের ডাকাত সর্দার নয়। জামুড়িয়ার গব্বর হল হামলাকারী হনুমান সর্দার। বাচ্চারা ঘুমোতে গেলে মা বাবারা বলতেন ‘সো যা বেটা গব্বর আ যায়েগা’। ঠিক তেমনই জোরজোনাকি গ্রামের আতঙ্কের নাম ছিল ‘গব্বর’। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই ভয় করছিলেন এই দুষ্টু হনুমানটিকে। হনুমানটি ধরা পড়ার পর তুলে দেওয়া হয় বনদপ্তরের হাতে।
গত দু’মাস আগে হঠাৎ করেই একদল হনুমান আসে জোরজোনাকি গ্রামে। সেই সময় গ্রামে আমের ফলন ছিল। আম শেষ হয়ে যাওয়ার পর অন্য হনুমানগুলি চলে গেলেও এই হনুমানটি রয়ে যায়। তারপরেই শুরু হয় উপদ্রব। পথচারীদের আঁচড় দেওয়া বা পিছন থেকে ঝাঁপ মেরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা প্রায় ঘটতেই থাকে। এর মধ্যে দুই বৃদ্ধ মহিলার হাত ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। দিনে দুপুরে সন্ধ্যায় গ্রামের লোক হাঁটাচলা করতে ভয় পেতে শুরু করেন। মা বাবারা ছেলেমেয়েদের স্কুল-টিউশন পাঠাতে ভয় পেতেন। ‘শোলে’ সিনেমার ডাকাত সর্দার ‘গব্বর সিং’-এর নাম অনুসারে ছেলে ছোকরার দল হনুমানটির নাম দেয় ‘গব্বর’। গ্রামবাসীদের দাবি, শুধু গ্রামবাসীদের ওপর চড়াও নয়, এই হনুমানটি অন্য হনুমানের উপরেও অত্যাচার চালাচ্ছিল। ভয়ে অন্য হনুমানগুলিও পাশের গ্রামে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজল ঘোষ বলেন, “গত দুমাস ধরে রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল এই হনুমানটি। এখনও পর্যন্ত ৩০ জন কমবেশি আক্রান্ত হয়েছেন গব্বরের হামলায়। কয়েকদিন আগে বনদপ্তরের কর্মীরা গব্বরকে ধরতে এসে ব্যর্থ হয়। তখন তাঁরা একটি লোহার খাঁচা রেখে গিয়েছিলেন। প্রায়ই খাঁচাতে টোপ দেওয়া হত। কিন্তু সে ধরা পড়তো না। সেই খাঁচাতে রবিবার পাকা পেয়ারা রাখা হয়। সকালে খাঁচার মধ্যে ঢুকে পেয়ারা নিতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় হনুমানটি।” গব্বর খাঁচাবন্দি হওয়ায় পর স্বস্তি পায় জোরজোনাকি গ্রামের মানুষ। খাঁচাবন্দি হনুমানটিকে উদ্ধার করে রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর বনদপ্তরের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। আসানসোলের রেঞ্জার অফিসার পঞ্চানন রক্ষিত বলেন, “হনুমানটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হবে। তারপর রূপনারায়ণপুর রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে। হনুমানটির মধ্যে অস্বাভাবিকতা রয়েছে। মানসিক রোগের শিকারও হতে পারে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.