মন্দিরের উদ্দেশ্যে ভক্তদের ঢল। নিজস্ব চিত্র
অসিত রজক, বিষ্ণুপুর: ষাঁড়েশ্বর মন্দির দীর্ঘ ৫ বছর পর খুলে দেওয়া হল। কিন্তু মন্দির খোলা হলেও এবার গাজনেও সন্ন্যাসীরা সেখানে পুজো দিতে পারবেন না। তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন সন্ন্যাসীরা। পুজো দিতে না পারলেও ষাঁড়েশ্বরকে দর্শন করতে পারবেন সন্ন্যাসী থেকে সাধারণ মানুষরা।
শনিবার ছিল ষাঁড়েশ্বরে গাজনের রাজাভাটা উৎসব। প্রথা অনুযায়ী এদিন গাজনের ভক্তরা বিষ্ণুপুর শহরে রাজদরবারে এসে রাজার কাছে গাজনে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে যান। এদিন থেকে চৈত্র সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত সন্ন্যাসীরা নিজ গোত্র ছেড়ে ‘শিব গোত্র’ ধারণ করেন। গাজনে বিষ্ণুপুর-সহ আশপাশের বহু এলাকা থেকে ভক্ত হওয়ার জন্য ডিহরে গাজনতলায় চলে আসেন।
বিষ্ণুপুর শহর থেকে ৮ কিমি দূরে মল্লরাজ আমলে তৈরি জোড়া শিবমন্দির ষাঁড়েশ্বর ও শৈলেশ্বর মন্দিরে শুরু হল চৈত্র সংক্রান্তির গাজন উৎসব। প্রায় ৮ বছর আগে বাজ পড়ে ষাঁড়েশ্বর মন্দিরে ফাটল ধরে। এরপর আর্কিওলজি সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে মন্দিরে কাজ শুরু হয়। সংস্কারের জন্য ৫ বছর ধরে মন্দির বন্ধ রাখা হয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে ষাঁড়েশ্বর মন্দিরে ঠিক পাশের শৈলেশ্বর মন্দিরে। এবার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গাজনে সন্ন্যাসীরা সেখানে পুজো দিতে পারবেন না। নতুনভাবে মন্দিরের অভিষেক না হওয়ায় গাজন কমিটি থেকে তেমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন সন্ন্যাসীরা।
বাবা ষাঁড়েশ্বরে গাজন উৎসব উপলক্ষে নির্মল দাস, পরিমহল চট্টোপাধ্যায় প্রশান্ত বাউরি, ঋষিকান্ত মাঝি প্রমুখ গাজনে হওয়া সন্ন্যাসীরা বলেন, ‘‘১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে মল্লরাজ পৃথ্বী মল্ল প্রাচীন বাবা ষাঁড়েশ্বর ও শৈলশ্বর মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় থেকে বিষ্ণুপুর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন মানুষেরা এই গাজনে সন্ন্যাসী হন। কিন্তু গাজনে আমরা দীর্ঘ পাঁচ বছর বাবার মন্দিরে পুজো দিতে পারছি না। এবং বাবার কাছে পুজো না দিতে পেরে গাজন উৎসব পালন হলেও কোথাও যেন একটা খামতি রয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের মনে হয়। যদি মন্দিরে অভিষেক আগেই করা হত, তাহলে এবারে সমস্ত সন্ন্যাসীরা ষাঁড়েশ্বর বাবার গাজন উৎসবের পুজো দিতে পারত।’’
মন্দিরের পুরোহিত মানিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছুদিন আগেই আর্কিওলজি সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিকরা মন্দিরটি আমাদেরকে হস্তান্তর করেছে। মন্দিরের যে সংস্কারের কাজ তা সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এই বছর গাজনের আগে মন্দিরের যে সমস্ত নিয়ম বা অভিষেক তা না করে পুজো দিতে তো দেওয়া যায় না। সেই কারণে এবার গাজনে সন্ন্যাসীরা দর্শন করতে পারবেন। কিন্তু পুজো করতে পারবেন না। কিন্তু আগামী বছর সন্ন্যাসীদের জন্য এবং সাধারণ মানুষের জন্য মন্দির দর্শন এবং পুজোর জন্য খুলে দেওয়া হবে।’’ এবারও বিগত বছরগুলির ন্যায় এবছর ষাঁড়েশ্বরে পাশে শৈলশ্বরে মন্দিরে গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.