দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: ছোটবেলা থেকেই দুর্নীতিতে হাত পাকিয়ে ছিল সে। মুম্বইয়ের একটি কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে মগরাহাটে স্টুডিও করারও পরিকল্পনা করেছিল। বহু যুবক-যুবতীদের চাকরি দেবে বলে কোটি কোটি টাকা গায়েব করেছে। এই কাণ্ডের বেশ কয়েক বছর এলাকাছাড়া ছিল সে। এরপর এলাকায় ফিরেও আসে। নতুন করে শুরু করে দুর্নীতি। আর সেই টাকা চাইতে গিয়ে খুন হন সিভিক ভলান্টিয়ার বরুণ চক্রবর্তী এবং তাঁর বন্ধু মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান বন্দনা মাখালের ছেলে মলয়।অভিযোগ, নিজের হাতে তাঁদের খুন করেছে জানে আলম।
কিন্তু কে এই জানে আলম? পুরো নাম জানে আলম মোল্লা। বাড়ি মগরাহাট থানার মোহনপুর এলাকাতে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল বড়। পড়াশোনায় মাদ্রাসার গণ্ডি টপকায়নি কখনও। অন্য এক ভাই আলমগীর মোল্লা এলাকায় এখন মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান। তবে আলমগীর বাবুর দাবি, জানে আলম মোল্লার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। জানে আলম মোল্লা সিপিএমের সময় থেকেই অসামাজিক কাজ শুরু করে।
সোনারপুর, বারুইপুর, যাদবপুর ও ডায়মন্ড হারবার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষকে চাকরি দেবে বলে টাকা নিত। ২০০৫-০৬ সাল নাগাদ জানে আলমের এই কারবার প্রথম নজরে আসে প্রশাসনের। সেই সময় চাকরি দেওয়ার জন্য বহু যুবক-যুবতীদের থেকে টাকা আত্মসাৎ করে সে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান প্রতারিতরা। পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে মগরাহাট থানা থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। থানা থেকে বেরনোর পর অভিযোগকারীদের উপর জানে আলমের দলবল চড়াও হয়। ভয় দেখায়। বেশ কয়েকজন জখমও হন। এরপর আর কেউই ওই টাকা ফেরত চাননি।
সেই সময়ে বেশ কয়েক মাস জেল খাটে এই কুখ্যাত দুষ্কৃতী। তারপর ছাড়া পেয়ে মুম্বই পাড়ি দেয়। মুম্বইয়ের একটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে মগরাহাটের মাগুরপুকুর এলাকাতে বেশ কিছু জায়গা জমি কেনে। উদ্দেশ্য একটি স্টুডিও বানানোর। কিন্তু সেখানে শুধুমাত্র একটি পাঁচিল দিয়ে দরজা তৈরি ছাড়া আর কিছুই হয়নি। নাম দেওয়া হয়েছিল জানে আলম স্টুডিও। মুম্বইয়ের সেই কোম্পানি মগরাহাট থানায় অভিযোগ জানায়। মোটা টাকা প্রতারণার অভিযোগ জানানো হয় তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে এলাকা ছেড়ে পালায় জানে আলম।
প্রথম স্ত্রী সিদ্দিক বিবিকে তালাক দেয়। ৬ সন্তান নিয়ে প্রথম স্ত্রী বর্তমানে বেহালাতে থাকেন। কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে এলাকায়। দ্বিতীয়বার বিয়ে করে মিনা বিবিকে । দ্বিতীয় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এখন মাগুরপুকুরেই থাকত সে। একটি চিটফান্ড কোম্পানিও খুলেছিল সে। নাম দেওয়া হয় আলম মানি মার্কেটিং কোম্পানি। বেশ কিছু মানুষকে সেই সংস্থায় চাকরিও দেয়। এলাকা থেকে টাকা তোলার ব্যবস্থা করে। কিন্তু রাজ্যে চিটফান্ড নিয়ে ধরপাকড় শুরু হলে, তা বন্ধ করে দেয়।
এলাকার মানুষের অভিযোগ প্রায়শই চার চাকা গাড়ি নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াত জানে আলম। সঙ্গে থাকত বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। কথায় কথায় তা দেখিয়ে সকলকে ভয় দেখাত সে। ইদানিং ইমারতি দ্রব্যের কারবার শুরু করে। সঙ্গে মুদিখানা সামগ্রী পাইকারি ব্যবসাও করত। শুধু তাই নয় এলাকার বিভিন্ন কসাইখানা থেকে মৃত পশুর হাড় কিনে তা এলাকার পুকুরে পচিয়ে বিক্রি করত। তার ফলে এলাকায় হত দুর্গন্ধ। বারবার অভিযোগ করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি জানে আলম। শনিবার জানে আলম খুন করে দু’জনকে। এ কাজে তার দ্বিতীয় স্ত্রী মিনা সাহায্য করেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.