ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রেশনে (Ration) সরবরাহ করা চালে বড়সড় বদল আনার পথে কেন্দ্র সরকার। মিড-ডে মিলে যে ফর্টিফায়েড রাইস (Fortified Rice) বা বিশেষ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চাল দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে, সেই চাল এবার দেওয়া হবে রেশনেও। আগামী বছরের গোড়া থেকে তা বিলির প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছে খাদ্যমন্ত্রক। তবে সব গ্রাহক সেই চাল পাবেন না। পাবেন শুধুমাত্র অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবারের গ্রাহকরা। রাজ্যে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ছয় কোটি এক লক্ষের কিছু বেশি। গোটা দেশে সেই সংখ্যা ৮০ কোটির বেশি। অর্থাৎ জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাধীন গ্রাহকদের জন্যই এই বিশেষ পুষ্টিগুণের চাল বিলির সিদ্ধান্ত প্রায় একপ্রকার পাকা করে ফেলেছে কেন্দ্র সরকার।
এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী বছর বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরের বছর লোকসভা ভোট। বাংলা-সহ গোটা দেশের বড় অংশের ভোটে প্রভাব ফেলতেই কেন্দ্র এই সিদ্ধান্তের পথে যাচ্ছে বলে মত বিরোধী দলগুলির। এ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ইতিমধ্যে এ নিয়ে বিজেপির নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছে। তাদের অভিযোগ, “কেন্দ্র রেশনে যে চাল দেয়, গ্রাহকরাই জানেন তার মান কেমন। বারবার তা ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর পরও মূলত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য এই সিদ্ধান্তের পথে যাচ্ছে তারা।”
খাদ্যমন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছেন। তার পরই এই কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে রাজ্য খাদ্যদপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রের পথেই এই ফর্টিফায়েড রাইস বা বিশেষ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চাল বিলির পথে হাঁটতে পারে তারাও। এ সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তা রাজ্য সরকারি স্তরেও শুরু হয়ে গিয়েছে। দপ্তরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাধীন কার্ডে যখন ফর্টিফায়েড চাল পাওয়া যাবে, তখন রাজ্য তাদের কার্ডে এই চাল না দিলে সেই গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। সে কথা ভেবেই প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।” কেন্দ্র সরকারের সেই পথে এগোনোর চূড়ান্ত বার্তা পেলে রাজ্য সরকারও তার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তাঁর কথায়, “আমাদের রাজ্যের গ্রাহকদের কথা ভেবেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হয়েছে।”
এই বিষয়টিকেই রাজ্যকে চাপে ফেলে পঞ্চায়েত ও লোকসভায় ভোটের ফসল তুলতে কেন্দ্রের কৌশল বলে ব্যাখ্যা তৃণমূলের। অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার আওতায় থাকা গ্রাহকরা পরিবার পিছু প্রতি মাসে ৩৫ কেজি চাল পান। বাকি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ও বিশেষ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত গ্রাহকদের মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে চাল প্রতি মাসে দেওয়া হয়। নতুন নিয়ম বলবৎ হলে দেশের ৮০ কোটির উপর গ্রাহকের জন্য রেশনে এই বিশেষ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চাল বিলি করবে কেন্দ্র।
কী আছে এই চালে? শরীরের পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য যা যা থাকা দরকার যেমন আয়রন, ভিটামিন বি ১২, জিঙ্ক, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ৬-এর মতো জরুরি উপাদান। এক কেজি সাধারণ চালের সঙ্গে ১০ গ্রাম অনুপাতে এমন বিশেষ গুণের চাল মিশিয়ে বিলি করার নিয়ম মিড-ডে মিলে। এক বছর পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকে এই চাল। স্বাদে কোনও হেরফের বোঝা না গেলেও সামান্য লালচে ধরনের দেখায় এগুলিকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.