পলাশ পাত্র, তেহট্ট: সারা দিন বাইরে দিব্যি কাজ চলছে। কিন্তু বাড়ির চৌকাঠ পেরলেই অজানা কারণে বিগড়ে যাচ্ছে মোবাইল। এক্কেবারে খারাপ। এক আধটা নয়, তিরিশটি মোবাইল ‘দেহ’ রেখেছে। বেগতিক বুঝে বাড়ির বাইরে বাঁশে তা ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছে। রাত হলে পাঠাতে হচ্ছে প্রতিবেশীর ঘরে। গত কয়েক মাস ধরে পরপর মোবাইল অকেজো হতে থাকায় চূড়ান্ত বিড়ম্বনায় নদিয়ার তেহট্টের বাসিন্দা দিলীপ মণ্ডল।
[জানেন, বারবার ফোটানো গরম চা শরীরের কী ক্ষতি করে?]
দিলীপবাবু পেশায় মুদির ব্যবসায়ী। চাষবাসও করেন। মোটের উপর স্বচ্ছলতা। পাশাপাশি তিনি গরুর ইঞ্জেকশন দেন। মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে তাই তাঁকে বেরতে হয়। বাইরে মোবাইল নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। যত গণ্ডগোল বাড়িতে ফিরলে। ঘরের মধ্যে ঢুকলে আচমকাই দিলীপবাবুর ফোন খারাপ হয়ে যায়। অথচ পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই মানুষটির প্রথম মোবাইল দিব্যি চলেছিল প্রায় ১০ বছর। সেই ফোনটি খারাপ হওয়ার পর থেকে যেন তাঁর গ্রহের ফের শুরু হয়েছে। যে মোবাইল আনুন না কেন তা বাড়ি ঢুকলেই অকেজো হয়ে যায়। প্রথমে দিলীপবাবু বিষয়টি আমল দেননি। কিন্তু বেশ কিছু ফোন খারাপ হওয়ার পর তাঁর আত্মবিশ্বাসটাই চলে যায়। নিজে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মানুষটি জানিয়েছেন, এর মধ্যে অশুভ আত্মা থাকতে পারে। কেউ হয়তো মন্ত্র দিয়ে একাজ করেছে। প্রতিবেশীদের ইর্ষার তিনি শিকার বলে মনে করেন দিলীপবাবুর। মোবাইল খারাপ হতে থাকায় তিনি দোকান বদলান। প্রথমে তেহট্ট, পরে কৃষ্ণনগর। তাতেও অবস্থা এতটুকু বদলায়নি। মোবাইল বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ির বাইরে বাঁশ পুঁতে তাতে মোবাইল টাঙিয়ে রাখছেন। চোর যাতে এর সুযোগ নিতে না পারে তার জন্য তাঁর বাড়ির লোককে রীতিমতো পাহারা দিতে হচ্ছে। আর সন্ধ্যে নামলে মোবাইল গিয়ে রেখে আসছেন প্রতিবেশীর বাড়িতে।
[মিলছে না আঙুলের ছাপ? আধার তৈরিতে নয়া নিয়ম আনল UIDAI]
মোবাইল নিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা। গত কয়েক মাসে কম দামি ফোন কিনেও দিলীপবাবুর প্রায় ৩০ হাজার টাকা জলে গিয়েছে। মোবাইল বিক্রেতারাও তাঁকে নিয়ে বিড়ম্বনায়। কারণ বারবার ফোন পালটে দেওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের কেউ বাড়ির ওয়ারিং তথা ইলেকট্রিকের লাইন নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই মতো বাড়ির বিদ্যুতের লাইন বদলান। তাতেও মোবাইলের যন্ত্রণা কমেনি। তেহট্টের নাটনা মাঠপাড়ার বাসিন্দার পরিবারও যেন অসহায় বোধ করছে। প্রত্যেকেই ধাঁধায়। কারণ রবিবারও একটি মোবাইল কিনেছিলেন দিলীপবাবু। ফল সেই এক। তিরিশটি মোবাইল কিনে এবার কার্যত বীতশ্রদ্ধ তেহট্টের বাসিন্দা। বিড়বিড় করে তিনি বলে চলেছেন আর মোবাইল কিনব না।
ছবি: প্রতিবেদক
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.