সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুলিশি হেফাজত শেষ হওয়ায় শনিবার মনুয়া মজুমদার ও তার অবৈধ প্রেমিক অজিত রায়কে পেশ করা হলে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বারাসত আদালত চত্বর। অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে এদিন আদালত চত্বরে প্রবল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, আদালত নয়, মনুয়া-অজিতকে জনতার হাতে তুলে দেওয়া হোক। জনতাই তাদের শাস্তি দেবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এদিন আদালত চত্বরে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনি৷ মনুয়ার আইনজীবীকেও হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ। মনুয়ার স্বামী অনুপম সিংকে ষড়যন্ত্র করে খুনের অভিযোগ এই দু’জনের বিরুদ্ধে৷ অভিযুক্ত দু’জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বারাসত আদালতে মনুয়ার পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াতে রাজি হননি। লিগাল এডের তরফে সুশোভন রায় নামে এক আইনজীবীকে মনুয়ার পক্ষে সওয়াল করার জন্য নিযুক্ত করা হয়। এদিন শুনানির পর সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সুশোভনবাবু বলেন, “মনুয়া নির্দোষ।” তাঁর মুখে এই কথা শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে উপস্থিত জনতা, বিশেষত মহিলারা। সুশোভনবাবুকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ।
গত ২ মে রাতে বারাসতের হৃদয়পুরের তালপুকুরের বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন অনুপম৷ তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এই খুনের মূল ষড়যন্ত্রী তাঁরই স্ত্রী মনুয়া৷ খুন করেছিল মনুয়ার প্রেমিক অজিত রায়৷ ঘটনার প্রায় প্রায় দু’সপ্তাহ পর এই দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ জেরায় অপরাধের কথা স্বীকার করে দু’জনেই৷ পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন এই দু’জনকে জেরা করে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি হাড়হিম করা তথ্য৷ মনুয়া ও অজিত যা বয়ান দিয়েছে তা শুনে থ’মেরে গিয়েছেন অনেক তাবড় পুলিশ অফিসারও৷ সাত বছর প্রেম করার পর অনুপমকে বিয়ে করে মনুয়া৷ এবং বিয়ের দেড় বছরের মাথায় প্রেমিককে দিয়ে তাঁকে খুন করায় মনুয়া নিজেই৷
ঘটনার দিন অনুপম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেই বাড়িতে নিজের প্রেমিক অজিতকে নিয়ে আসে মনুয়া৷ মদ ও সিগারেটের ফোয়ারা চলে৷ খুনের কয়েকটা ঘণ্টা আগে প্রেমিকের সঙ্গে অভিসারে মেতে ওঠে মনুয়া৷ প্রেমিকের সঙ্গে মিলনের পর ওই বাড়িতে তাকে রেখে বাপের বাড়ি ফিরে যায় মনুয়া৷ আর রাতে অনুপম বাড়িতে ঢুকতেই লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে খুন করে অজিত৷ তার ফোন থেকে গোটা ঘটনাটির লাইভ টেলিকাস্টও শোনে মনুয়া৷ মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি দিয়ে অনুপমের হাতের শিরা কেটে দেয় অজিত৷ সম্প্রতিকালে এত ঠাণ্ডা মাথায় খুনের ঘটনা দেখা যায়নি বলে মত পুলিশের৷
অনুপমের পরিবার বাংলাদেশে থাকে৷ নিজের বলতে এদেশে কেউ নেই৷ কিন্তু এদিন বারাসত আদালতে অনুপমের জন্য ভিড় উপচে পড়েছিল৷ প্রত্যেকের একটাই দাবি, এই নৃশংস ঘটনায় অভিযুক্ত মনুয়া ও তার প্রেমিক অজিতের ফাঁসি চাই৷ এক্ষেত্রে পরিবারের লোক নয়, ভিনদেশের এই যুবকের হয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন বারাসতের বাসিন্দারা৷ কেন? একবাক্যে সবাই বলেন, “অনুপম বিপদের সময়ে সবার পাশে দাঁড়াত৷ ওঁর মতো ছেলে হয়না৷ আমরা কোনও মতেই ওঁর খুনিদের পার পেতে দেব না৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.