বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: একটা বছর পেরিয়ে গেল। সরস্বতী পুজোর দিন অনুষ্ঠানে গিয়ে খুন হয়েছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। খুনের ঘটনায় জড়িত কারও এখনও কোনও সাজাই হয়নি। তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিধায়কের স্ত্রী রুপালি বিশ্বাস। রবিবার, সত্যজিতের মৃত্যুবার্ষিকীতে জেলা তৃণমূলের তরফে আয়োজিত স্মরণসভায় গিয়ে কেঁদে ফেললেন রুপালি। চোখের জল মোছার পর তাঁর মুখের রেখায় ফুটে উঠল অভিমান, ক্ষোভ। বললেন, “যে বা যারা আমার স্বামীকে খুন করেছে, তাদের এখনও সাজা হয়নি। একটি বছর পেরিয়ে গেল, অথচ কেন তাদের এখনও সাজা হল না? কেন এত দীর্ঘ সময় লাগছে? আমি চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সাজা ঘোষণা করা হোক। আমি চাই, খুনির ফাঁসি হোক।”
২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, নদিয়ার হাঁসখালিতে সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে খুন হয় সত্যজিৎ বিশ্বাস। দুষ্কৃতীরা পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি চালিয়ে চম্পট দেয়। গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান তৃণমূলের তরুণ বিধায়ক তথা এলাকার জনপ্রিয় নেতা। তদন্তভার নেয় সিআইডি। দুষ্কৃতীরা গ্রেপ্তার হলেও, বিচারপ্রক্রিয়া শেষে এখনও সাজা হয়নি কারও। ধৃতরা সকলে বিজেপির সক্রিয়া সদস্য বলে খবর। তদন্তের জাল গুটিয়ে আনতে সম্প্রতি সিআইডির তৎপরতা চোখে পড়ছে। রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা জেলা বিজেপি সভাপতি জগন্নাথ সরকারকে ভবানীভবনে ডেকে লাগাতার জেরা চলছে।
সেদিন যেখানে খুন হয়েছিলেন সত্যজিৎ, এক বছর পর সেই মাঠেই তাঁর স্মরণসভার আয়োজন করেছিল নদিয়া জেলা যুব তৃণমূল। সত্যজিৎ বিশ্বাসের ছবিতে মাল্যদান, রক্তদান শিবির এবং দুঃস্থদের কম্বল, বস্ত্র দান করে এই দিনটি পালন করেন তাঁরা। সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন জেলার প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি গৌরীশংকর দত্ত, বর্তমান যুব তৃণমূল সভাপতি রত্না ঘোষ কর, বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহরায়, নীলিমা নাগ-সহ অনেকেই। এক বছর পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এখনও দোষীদের কারও সাজা না হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা অনেকেই।
ছোট্ট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্মরণসভায় যান বিধায়কের স্ত্রী রুপালিও। একটি বছর পরও চোখের জল শুকোয়নি তাঁর। সাদা মালায় ঘেরা স্বামীর ছবিটা দেখেই কেঁদে ফেলেন রুপালি। চোখের জল মুছতে মুছতেই বলেন, “ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে একটি বছর যে কী কষ্টের মধ্যে আমাকে কাটাতে হয়েছে, তা বলে বোঝানোর ভাষা নেই। আমি আইনি সহযোগিতা পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু একটি বছর হয়ে গেল, যে আমার স্বামীকে খুনের কথা স্বীকার করেছে, তার এখনও পর্যন্ত সাজা না হওয়াটা খুবই আপশোসের। আমি চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুনির ফাঁসি হোক। খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলতে মানুষ দেখুক, তাতে এমন অপরাধের প্রবণতা কমবে। আর আমার স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনায় যারা যুক্ত, তাদের কঠোর শাস্তি হোক।” স্মরণসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিধায়ক গৌরীশংকর দত্ত এবং দলের অন্যান্য নেতৃত্বের বক্তব্য, সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্মরণসভা হয়ে উঠুক একটা শপথ নেওয়ার দিন – অন্য়ায়ের বিরুদ্ধে, অপরাধের বিরুদ্ধে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.