সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শনিবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিলেন অগ্নিদগ্ধ রোগী। আর রবিবার সকালে বর্ধমানের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের জলাশয় থেকে দেহ উদ্ধার হল ওই ব্যক্তির। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। নিরাপত্তারক্ষীদের, হাসপাতাল কর্মীদের নজর এড়িয়ে কীভাবে ওই রোগী হাসপাতালের বাইরে গেলেন, কীভাবেই বা জলাশয়ে ডুবে তাঁর মৃত্যু হল তা নিয়েও রহস্য দেখা দিয়েছে। মাস দেড়েক আগেই ময়নাতদন্তের আগে মৃতদেহ গায়েব হয়ে গিয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। নজর এড়িয়ে পরিজনরা ময়নাতদন্ত না করিয়েই দেহ নিয়ে গিয়ে সৎকার করে দিয়েছিলেন অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া মহিলার। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নিখোঁজ রোগীর দেহ উদ্ধার হল জলাশয় থেকে। ফের বড় প্রশ্নের মুখে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম সেরা হাসপাতালের সুরক্ষা ব্যবস্থা।
হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা এদিন জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় অগ্নিদগ্ধ এক রোগী নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশের কাছে সেই ব্যাপারে রিপোর্টও করা হয়েছে। তার বেশি তিনি কিছু জানাতে চাননি। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। হাসপাতালেই রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। এছাড়া হাসপাতালে বর্তমানে ৮ জন সুপারভাইজার-সহ ২৯২ জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। তা সত্ত্বেও সকলের নজর এড়িয়ে ওই রোগী কীভাবে বাইরে গেলেন ও তাঁর মৃত্যু হল তা তদন্ত করে দেখছে জেলা পুলিশ।
[লাভপুর কাণ্ডে নয়া মোড়, মেয়েকে অপহরণের গল্প ফেঁদে গ্রেপ্তার বিজেপি নেতা]
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে ওই অজ্ঞাতপরিচয় রোগীকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে বর্ধমান রেল পুলিশ। তাঁকে হাসপাতালের দোতলার বারান্দায় একটি খাটে রাখা হয়েছিল। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। আশেপাশে থাকা অন্য রোগীরা জানাচ্ছেন, কয়েকদিন ধরেই ওই অগ্নিদগ্ধ রোগী গায়ে প্লাস্টিকের চাদর চাপিয়ে বারবার পালানোর চেষ্টা করছিলেন। সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁকে ধরে এনে আবার হাসপাতালের শয্যায় দিয়ে গিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে আচমকাই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। পাশের শয্যার অন্য রোগীরা জানাচ্ছেন, ওই রোগী হিন্দিভাষী ছিলেন। তবে তবে নাম ঠিকানা কিছুই বলতেন না। প্রায়ই চিৎকার করতেন। সম্ভবত পুড়ে যাওয়ার কারণে জ্বালা থেকে। কেউ কেউ মনে করছেন সেই জ্বালা জুড়োতেই হাসপাতালের সামনের শ্যামসায়রে জলে নেমে কোনওভাবে ডুবে গিয়ে থাকবেন ওই রোগী।
গত ১ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যায় আরতি মাঝি নামে এক মহিলার দেহ। তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকলের নজর এড়িয়ে আরতিদেবীর দেহ নিয়ে চলে যান পরিবারের লোকজন। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এবার রোগী নিখোঁজ এবং তার পর জলাসয় থেকে দেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিরাপত্তার ফাঁক ফের প্রকাশ পেল। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর চাপ প্রচুর এই হাসপাতালে। আবার অনেক রাস্তা রয়েছেন হাসপাতালে বাইরে যাওয়ার। কোন ফাঁকে কে চলে যাচ্ছে সেটা নজরে রাখাও মুশকিল বলে দাবি করছেন তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এত নিরাপত্তারক্ষী, সুপারভাইজার, পুলিশ ক্যাম্প রেখেও সেটা কেন সম্ভব হচ্ছে না।
[অদম্য জেদ, বাবার কাঁধে চেপেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে কালনার গৌরব]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.