শুভদীপ রায় নন্দী, শিলিগুড়ি: ইভটিজিংয়ের জেরে আত্মঘাতী হল এক কিশোরী। মৃতের নাম শুশ্রিতা মুখোপাধ্যায়। রবিবার সকালে ঘটনাটির কথা জানাজানি হতেই উত্তেজনা ছড়ায় শিলিগুড়ি শহরে। পুলিশের উদাসীনতার জন্য এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। ওই ছাত্রীটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শুশ্রিতা মুখোপাধ্যায় শিলিগুড়ি হাকিমপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ি শিলিগুড়ি সংলগ্ন ডাবগ্রাম ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্য শান্তিনগর এলাকার কানকাটা মোড়ে। শনিবার রাতে নিজের বাড়ি থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, কয়েকমাস ধরে স্থানীয় বৌবাজারে অবস্থিত মাংসের দোকানের কর্মচারী নানু কর শুশ্রিতাকে বিরক্ত করত। বেশ কয়েকবার মদ্যপান করে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বাড়িতে চড়াও হয়। গত বুধবার শুশ্রিতাকে রাস্তায় আটক হেনস্তা করে বলেও অভিযোগ। শুশ্রিতার পরিবারের তরফে ওই যুবককে বারবার বোঝানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। এই ঘটনার ফলে ছাত্রীটি মানসিক অবসাদে ভুগছিল। এর জেরেই আত্মহত্যা করেছে সে। এই ঘটনার পর আশিঘর ফাঁড়িতে অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। এমনই অভিযোগ মৃতের পরিবারের৷
যদিও এই বিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (জোন ১) গৌরব লাল বলেন, “ঘটনাটির তদন্ত চলছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মৃতের বাবা সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বহুবার মেয়ে এসে নানুর বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। ভয়ে ঘর থেকেও বেরোতে চাইত না। রাস্তায় বের হলেই ওই যুবক হাত ধরে টানাটানি করত। আমি নিজে কয়েকবার ওই যুবককে বুঝিয়েছি। পুলিশের কাছে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছিলাম। কিন্তু, কাজ হয়নি।” ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ সুবীর কংসবণিক বলেন, “এই ঘটনার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি তারা।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার বিকেলে শুশ্রিতা বাড়ি থেকে বেরোতেই কিছুটা দূরে তার রাস্তা আটকায় নানু। সাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে তার মোবাইল থেকে শুশ্রিতার মাকে ফোন করে জানাতে বলে যে সে পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। শুশ্রিতা রাজি হয়নি বলে তাকে হুমকিও দেয়। এসময় সুযোগ বুঝে নানুর মোবাইল ফেলে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় শুশ্রিতা। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপ অবস্থায় শুশ্রিতার বাড়িতে চড়াও হয় নানু। তখন শুশ্রিতার বাবা নানুর মোবাইল সারিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। বৃহস্পতিবার মোবাইল সারিয়ে দিতে গেলে নতুন মোবাইল দাবি করে নানু। বাধ্য হয়ে শনিবার বিকেলে তাকে নতুন মোবাইল কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সঞ্জয়বাবু। সেই কথা অনুযায়ী শনিবার বিকেলে শুশ্রিতাকে বাড়িতে রেখে সঞ্জয়বাবু ও তাঁর স্ত্রী ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যান। আর বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ওই কিশোরী। এমন ঘটনায় স্বভাবতই শোকাচ্ছন্ন পরিবার৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.