সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “করোনা আজার দো, জটেত তে হো হূয়ু আ/সানাম কগে সাঙ্গিন সাঙ্গিন বন তাহেন মা/ অন্ততঃ দু’ ফুট সাঙ্গিন রে।/ বার বার সাবন তে, তি, বন আরুপ মা।/ মেদ, মুখান,মু করে তিতে আলবন জটেত মা।/ প্রতিদিন বন রেয়াড়: অ: মা সাবান তে। অড়া দুয়ার লগড়ীজ/ কিতার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বন দহয় মা।” সাঁওতালি ভাষার এই কথাগুলোর বাংলা করলে দাঁড়ায়, “করোনা সংক্রমণ সংস্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে। তাই নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। মাঝে মধ্যেই সাবান দিয়ে হাত ধোন।”
পুরুলিয়ার আদিবাসী গ্রামগুলিতে এখনও করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে কোনও ধারণা সেভাবে তৈরি হয়নি, নেই সচেতনতাও। তাই সেসব গ্রামে করোনা সচেতনতায় সোশ্যাল ডিসট্যান্স নিয়ে বার্তা দিতে এইভাবেই সাঁওতালি ভাষায় প্রচার করছেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। গত চার-পাঁচ দিন ধরে মানবাজার এক, পুঞ্চা, হুড়া ব্লকের জিতুজুড়ি, দলদলি, রামনগর, পায়রাচালি, ভালুবাসা-সহ একাধিক গ্রামে সাঁওতালি ভাষাতেই সচেতনতার পাঠ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আরও প্রশংসনীয় বিষয় এটাই যে, মন্ত্রী কোনওরকম প্রোটোকল ছাড়াই এই কাজে নেমে পড়েছেন।
আদিবাসীদের মতো কোমরে পাঞ্চি শাড়ি জড়িয়ে, গ্লাভস-মাস্ক পরে যখন তিনি ভীতি কাটাতে দরজায়-দরজায় গিয়ে অভয় দিচ্ছেন, তখন দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি একজন মন্ত্রী। দিনভর তাঁর এই প্রচারে সঙ্গী স্বামী তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের শিক্ষা-সংস্কৃতি-তথ্য-ক্রীড়া স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ গুরুপদ টুডু। তবে শুধু প্রচারই নয়, বাড়ি-বাড়ি মাস্ক, সাবান সেই সঙ্গে ত্রাণসামগ্রী তুলে দিচ্ছেন নিরাপদ দূরত্ব রেখেই। বুধবার দিনভর এসব করার পর বৃহস্পতিবারও তাঁকে দেখা গেল সেই এক রূপে। আদিবাসী মহিলারাও তাঁকে এভাবে কাছে পেয়ে কিছুটা ভরসা পেলেন।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ে অস্ত্রোপচার হয় রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর। ফলে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তিনি কলকাতাতেই ছিলেন। সেখানে থেকে ফোনে নানা জায়গায় যোগাযোগ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা মেটাচ্ছিলেন। এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তবুও তাঁর এলাকায় পা রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মন্ত্রীর কথায়, “শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগবে। কিন্তু এই জন্য তো বসে থাকতে পারি না। এই রোগ নিয়ে মানুষজনকে সচেতন করতেই হবে। না হলে বড় বিপদ হয়ে যাবে।”
আসলে, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এখনও করোনা নিয়ে বহু মানুষের সে ভাবে ধারণা নেই। অস্ত্রোপচার শেষে কলকাতাতে বসেই সেটা উপলব্ধি করেছিলেন মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। তাই চিকিৎসকের নিষেধ উড়িয়ে মানবাজার, পুঞ্চা, হুড়ার আদিবাসী জনপদে প্রচার শুরু করেছেন। ঘরে থাকলেই ‘করোনা রাক্ষস’কে বধ করা যাবে, আদিবাসী পাড়ায় পাড়ায় সেটাই বোঝাচ্ছেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী।
ছবি ও ভিডিও: সুনীতা সিং।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.