বিশেষ সংবাদদাতা: ভারী বর্ষার আগেই রাজ্যের বিপজ্জনক ২৪৫ কিমি বাঁধ মেরামত ও সুদৃঢ় করতে চান দ্বিতীয় দফায় সেচমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ খাতায়-কলমে এক মাস সময় ধার্য হলেও তিন সপ্তাহের মধ্যে বাঁধ-মেরামতি সম্পূর্ণ করে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চান তিনি৷ তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, গতবারের চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে কাজ শেষ করতে হবে৷ নেত্রীর এই নির্দেশ সেচ দফতরের সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মীরা দিনরাত এক করে বাস্তবায়ন করছেন৷ যেমন সেচ দফতরের অধীন যত খাল-বিল এবং নালা রয়েছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে সাফাই সম্পূর্ণ করতে হবে৷ কোথাও কচুরিপানা বা আবর্জনা জমতে দেওয়া যাবে না৷ কারণ, বৃষ্টি হলে এগুলি জল আটকে দিয়ে এলাকায় দুর্ভোগ তৈরি করবে৷”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মাথায় রেখে ১ জুন থেকে ফ্লাড কন্ট্রোল রুম চালু করে দিয়েছেন সেচমন্ত্রী৷ টোল ফ্রি নম্বরটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে৷ সমস্যার খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের বিশেষ টিম কন্ট্রোল রুমে ‘রাউন্ড দ্য ক্লক’ ডিউটিতে থাকছেন৷ দক্ষিণবঙ্গের জন্য নম্বরটি হল ১৮০০৩৪৫০১১৭৷ আর উত্তরবঙ্গের জন্য কন্ট্রোলরুমের নম্বর হল ১৮০০৩৪৫৩২৫৫৷ একই সঙ্গে এবারই প্রথম বর্ষাকালেও প্রতিদিন সাইকেলে চেপে সেচ দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়ে বাঁধের পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টাই নজরদারি শুরু করছে রাজ্য সরকার৷ কারণ, অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, ভোর রাতে বা ছুটির দিনে বাঁধে ফাটল দেখা গেলে সে খবর সময়মতো সেচ দফতরে পৌঁছয় না৷ অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাই এবার দফতরের কর্মীদের দিয়েই ছুটির দিনেও ২৪ ঘণ্টা বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা চালু করেছেন সেচমন্ত্রী৷
বিপজ্জনক বাঁধ মেরামত ও সুদৃঢ় করার বিষয়টি যে এই মুহূর্তে দফতরের প্রথম ও প্রধান কাজ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব পাওয়া সেচমন্ত্রী৷ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই বিপজ্জনক বাঁধের সমীক্ষা করতে বলেছিলাম৷ সেই তালিকা ধরেই সুন্দরবন থেকে শুরু করে পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, বর্ধমান এমনকী, উত্তরবঙ্গের ৭২টি নদীর বিপজ্জনক এলাকা চিহিত করা হয়েছে৷ বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের কার্যত ছুটি বাতিল করে মেরামতির টার্গেট সম্পূর্ণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তবে শুধুমাত্র সেচ ভবনে বসে বৈঠক করেই থামছেন না সেচমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মাথায় রেখে বাঁধের নিয়ন্ত্রণ এবং মেরামতি নজরদারি করতে ছুটছেন জেলায় জেলায়৷ বিভাগীয় শীর্ষ অফিসার এবং ইঞ্জিনিয়ারদেরও বিভিন্ন ডিভিশনে পৌঁছে গিয়ে সংস্কারের কাজে তদারকি করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷
রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে ডিভিসি জল ছেড়ে দেওয়ায় হাওড়া-হুগলি ও বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে জনপদে চরম দুর্ভোগ তৈরি করছিল৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে এ বছর থেকে ডিভিসির সঙ্গে রাজ্য সরকারের একটি সমন্বয় ইউনিট তৈরি হয়েছে৷ যেখানে ডিভিসির দু’জন এবং রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের দু’জন মিলিয়ে মোট চারজন ইঞ্জিনিয়ার এই ইউনিটে থাকবেন৷ জল ছাড়া এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডিভিসি ওই ইউনিটকে আগে জানাবে৷ মন্ত্রী রাজীববাবু জানান, “ডিভিসির বাঁধে সর্বোচ্চ জলধারণ ক্ষমতা পেরিয়ে যাওয়ার পরেই একমাত্র জল ছাড়বে৷ এবং তা ওই ইউনিটের মাধ্যমে রাজ্যকে অবগত করেই৷” সংশ্লিষ্ট তিন জেলার জেলাশাসক এবং প্রশাসনকেও আগে থাকতেই সতর্ক করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে৷ ডিভিসি জল ছাড়লে যে সব এলাকা প্লাবিত হয়, সেখানে এবার আগে থেকেই দুর্গতদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হচেছ৷ একই সঙ্গে প্রতিবেশী দুই রাজ্য সিকিম, অসম ও প্রতিবেশী দুই দেশ বাংলাদেশ এবং ভুটানের সঙ্গেও নদীর জলসীমা বৃদ্ধি নিয়েও নজর রাখা হচ্ছে৷ কারণ, ওই দুই রাজ্য এবং দুই প্রতিবেশী দেশের বেশ কিছু নদীর জল বর্ষার সময়ে ঢুকে পড়ে রাজ্যের কয়েকটি জেলায় প্লাবন সৃষ্টি করে৷ প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে রাজ্য সরকার৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.