সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: “বড় আশা করে এসেছি গো, কাছে ডেকে লও।” কার্যত গোটা তৃণমূলের মনের এই গান গেয়েই জনসংযোগ শুরু করলেন পর্যটন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির একাধিক এলাকায় শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার সারাদিন চষে বেড়ালেন টানা দু’বারের মন্ত্রী। একে নিজের বিধানসভা এলাকা, তার উপর তিনি আবার পাশের জেলা দার্জিলিংয়ের দলীয় জেলা সভাপতিও। ফলে প্রশাসনিক, দলীয় সর্মসূচি- সব মিলে মিশে এক হয়ে গেল। তবে গোটা কর্মসূচির মধ্যেই তিনি অতিমাত্রায় স্বাভাবিক এবং ‘আনকনভেনশনাল’ ছিলেন। যদিও এর মধ্যেও বিরোধী খোঁচা হজম করতে হয়েছে তাঁকে।
মন্ত্রী জানান, ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে এসে ভালই লাগছে। এখন থেকে সব কাজের ফাঁকে অন্তত মাসে পনেরো দিন নিজের বিধানসভায় থাকার চেষ্টা করবেন। এদিনের কর্মসূচির নির্ধারিত এলাকা হেঁটে ঘুরেছেন তিনি। তবে বেশ কিছু অভিযোগও পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এবং তা যথাসাধ্য সমাধানের চেষ্টা করবেন বলেও আশ্বাস দেন। শুক্রবার সন্ধেয় ফাঁপড়ি এলাকার একটি মাঠে খোলা সভায় আলাপচারিতার মাঝেই স্থানীয়দের অনুরোধে মাইক চেয়ে নিয়ে গান শুরু করেন মন্ত্রী। সেখানেই তাঁর গানের বাছাই নিয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়ে যায়। তিনি কি ইচ্ছে করেই ওই গান গাইলেন? প্রশ্ন তোলেন সভায় উপস্থিত অনেকেই। কবিতাও আবৃত্তি করেন গৌতম দেব।
গানের পাশাপাশি রাতে ছোট ফাঁপড়িতে দলীয় কর্মী অনুকূল ঘটকের বাড়িতে মাটিতে পাত পেড়ে ভাতও খান। ডাল, ভাত, সবজি, মচমচে আলুভাজার সঙ্গে বোরোলি মাছের ঝোল খেয়ে মন্ত্রী নিজে তৃপ্তি প্রকাশ করেন। খুশি আয়োজক পরিবারও। তাঁদের দাওয়ায় মন্ত্রী ভাত খাচ্ছেন এমন চবি মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করে রাখার সুযোগ হাতছাড়া করেননি কেউই। অনেকেই অবশ্য মনে করতে পারছেন না শেষ কবে মন্ত্রী তথা বিধায়ককে এত কাছাকাছি পেয়েছেন। তবে অনেকেই খুশি এভাবে অন্তত কর্মসূচির অংশ হলেও মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে। অভাব-অভিযোগের পাশাপাশি অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এই উদ্যোগকে।
যদিও তাঁর এই জনসংযোগ ও এই এলাকায় তৃণমূলকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে না বলে কটাক্ষ করেছেন শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, আসল সময় তৃণমূল মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেনি। তাই এখন এসব করে কোনও লাভ হবে না। তাঁদের মেয়াদ শেষ।
শনিবার সকাল থেকে নিজের বিধানসভা এলাকার একাধিক জায়গায় যান মন্ত্রী। প্রাতরাশ সারেন গ্রামেই। এরপর স্থানীয় মন্দিরে আসন পেতে যোগ ব্যায়াম ও অনুশীলন করেন। পরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “মানুষের সঙ্গে সারা বছরই থাকার চেষ্টা করি। তবে তার চেহারা হয়তো অন্যরকম থাকে। প্রশাসনিক কিংবা মন্ত্রিত্বের মোড়কে ঘুরতে হয় বেশিরভাগ সময়ই। এইভাবে খোলামেলা হয়তো সবসময় থাকতে পারি না। তবে এই জনসংযোগে নতুন করে উদ্যম ফিরে পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। মানুষের কাছাকাছি থাকতে চাই।” গত আট বছর বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী থাকার পর গৌতমবাবুর উপলব্ধি, “মানুষ কেন আমাদের কাছে আসবে। আমাদেরই যেতে হবে তাঁদের সমস্যা কি তা বুঝতে। ভোটের সময় যখন আমরা যেতে পারি, সারা বছর আমাদের এই তাঁদের পাশে থাকা উচিত। আগামী ১৫ দিন এই কর্মসূচি লাগাতার চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এদিন জনসংযোগ যাত্রার মাঝেই শিলিগুড়ি পুরনিগমের শপথ স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন মন্ত্রী। একই পদ্ধতিতে শিলিগুড়িতে প্রচার চালাবেন বলে তৃণমূল জেলা সভাপতি এদিন পরিষ্কার করে দেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.