টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: চাষিদের থেকে ধান কেনার পর ছয়মাস পর্যন্ত ওই ধান থেকে পাওয়া চালের দায়িত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট ধানকল মালিকদের উপরে। ওই সময়ের মধ্যে কোনও কারনে ধান নষ্ট হলে ধানমিল মালিকদের চাল বদলে দিতে হবে। আগেই এই নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য সরকার৷ এতেই আপত্তি তুলেছেন ধানমিল মালিকরা। রাজ্য সরকারের নতুন এই নির্দেশিকায় রাজ্যজুড়ে বেঁকে বসেছেন ধানকল মালিকরা। এমত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার থেকে বাঁকুড়া জেলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারি সহায়ক মূল্যে চাষিদের থেকে ধান কেনা শুরু করলে রাজ্য সরকার।
[অসমের পাশে বাংলা, তিনসুকিয়া গণহত্যার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে মিছিল তৃণমূলের]
সূত্রের খবর রাজ্য সরকারের নতুন এই নির্দেশ মানতে চাইছেন না রাজ্যের ধানকল মালিকরা। সরকারি ভাবে এদিন থেকে ধান কেনা শুরু হলেও রাজ্যজুড়ে কোনও মিল মালিক ধান কেনার জন্য সরকারের সাথে চুক্তি করেননি। এতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়াটি ঘিরে। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের কর্তাদের কপালে। তবে খাদ্য দপ্তরের অনেক আধিকারিকই চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের রাজ্যের কৃষকরা জমির ফসল বিক্রি করেন। চলতি নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ফসল জমিতেই থাকবে। তাঁদের আশ্বাস এই সময়ের মধ্যে ধানকল মালিকদের সমস্যা মিটে যাবে। যদিও বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে বাঁকুড়ার জেলা খাদ্য নিয়ামক আবির বালি জানান, তিনি কিছউ জানেন না৷ সম্পূর্ণ বিষয়টি দেখছে রাজ্য খাদ্য দপ্তর৷ এই বিষয়ে জানা জন্য রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও, তা সম্ভবপর হয়নি৷
সরকারের এই নির্দেশিকার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের ধানমিল মালিক অ্যাসোসিয়েশানের কোষাধ্যক্ষ তথা বাঁকুড়ার ধানমিল মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তারাপদ মহাপাত্র৷ তাঁর সাফ কথা, “ধান কেনার সময় সরকারের কোয়ালিটি কনট্রোলার এবং ফুড ইন্সপেক্টর সেখানে উপস্থিত থাকেন। ফলে কেনার সময়ই ধান দেখে কেনা হক। গোডাউনে রাখার কারনে যদি চাল নষ্ট হয় তাহলে মিল কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই দায়ি থাকবে না। সরকার এই শর্ত মেনে নিলে ধানমিল মালিকরা সরকারের সাথে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে চুক্তিবদ্ধ হবে।” তিনি আরও জানান, রাজ্য সরকারের এই নির্দেশের বিষয়ে গত বুধবারই বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের অফিসে বৈঠকে বসেন রাজ্যের সমস্ত ধানমিল মালিকরা৷ তাঁর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে গোডাউনে চাল পড়ে থাকলে এবং তা নষ্ট হলে ধানকল মালিকরা চাল ফেরত দিয়ে দেবে৷ পুরানো সরকারি নির্দেশই বহাল রাখতে হবে সরকারকে৷ হুঁশিয়ারি দিয়ে তারাপদ মহাপাত্র জানান, নাহলে রাজ্যজুড়ে চলতি বছর সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়া বয়কট করবেন তাঁরা৷
[বিশ্বের দীর্ঘতম ‘স্টেপল চেন’ তৈরি করে গিনেস বুকে শান্তিপুরের অনুপম]
জানা গিয়েছে, ধানমিল মালিক ছাড়াও বিভিন্ন সমবায় সমিতি এবং সরকারের নিজস্ব ধান ক্রয়কেন্দ্রগুলিও ধান কিনে থাকে৷ কুইন্টাল প্রতি ৩০ টাকা খরচে সেই কেনা ধান থেকে চাল তৈরি করেন ধানকল মালিকরা। অভিযোগ, অনেক সময় একাধিক ধানমিল মালিক চাল ফেরত দেন না। চলতি বছর এই অভিযোগে বাঁকুড়ায় তিনটি ধানকল মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর৷ সূত্রের খবর রাজ্যজুড়ে ৮০০টি ধানমিল মালিক প্রতিবছর এই ধান কেনার প্রক্রিয়া চালান। তাঁরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকেন। কিন্তু এইবছর এখনও পর্যন্ত কোনও ধানমিল মালিক চুক্তিবদ্ধ হননি৷ চলতি বছর এক ধাক্কায় ধানের সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ২০০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। তাই খাদ্য দপ্তরের অনুমান, চালকল, আড়তদারদের এড়িয়ে চাষিরা সরাসরি সরকারের ঘরেই ধান বিক্রি করতে চাইবেন। ফলে বিভিন্ন ব্লকের কিষান মান্ডিগুলিতে ছড়িয়ে থাকা ধানসংগ্রহ কেন্দ্রে পুজোর পর থেকেই বাড়বে চাষিদের ভিড়। এমত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন খাদ্য দপ্তরের কর্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.