নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পেটের জ্বালা বড় বালাই। তাই অন্নসংস্থানে বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া। এই করেই সংসার চলে লক্ষ্মীরাম মুর্মুদের।প্রত্যেকবারের মতোই এবারও ঝাড়খণ্ডের রুক্ষ জমি ছেড়ে সুফলা বাংলায় মজুর খাটতে এসেছেন তাঁরা। তবে গণতন্ত্রের উৎসবেও অবশ্যই অংশ নেওয়া চাই। তাই লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফায় ভোট দিতে বর্ধমান থেকে বাড়ি ফিরছেন ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকরা।
আগামী রবিবার দুমকা-সহ ঝাড়খণ্ডের তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। তাই দুমকার রামগড়, পাতাবাড়ি, কারমিদার থেকে বর্ধমানে আসা শ্রমিকরা বাড়ি ফিরছেন। পর্যাপ্ত বাস না থাকে রীতিমতো শুরু হয়েছে সিট দখলের লড়াই। উল্লেখ্য, দুমকা যাওয়ার জন্য সহজ পথ হচ্ছে সিউড়ি থেকে বাস ধরা। তাই এখানেই ভিড় করছেন গোটা জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা। এদের মধ্যে দুমকার রামগড়, পাতাবাড়ি, কারমিদারের মানুষই বেশি।বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিউড়ির নেতাজী বাসস্ট্যান্ডে পিলপিল করছে মানুষ। সিউড়ি থেকে ঝাড়খণ্ডের বাস যেহেতু তুলনায় কম, তাই বাসের ভিতরে ও ছাদে বাদুড়ঝোলা পরিস্থিতি। লক্ষ্য একটাই সময়ে গ্রামে ফিরতে হবে। বাসের সিঁড়ি দিয়ে মাথায় বোঁচকা চাপিয়ে উঠতে উঠতে পাথারিয়া গ্রামের বাবুলাল মাড়ান্ডি বললেন, “প্রথমে দুমকা যাব। সেখান থেকে পাথারিয়া গ্রামে ফিরতে সন্ধ্যা। তবু নিজের গ্রামে ফেরা তো।” সোম মারান্ডির কথায়, “এখনও ধান কাটা শেষ হয়নি। কাজ বাকি রেখেই চলে এসেছি। বাবুরা ছেড়ে দিয়েছে। নিজের হাতে ভোট দেব।”
শ্রীনিলা মুর্মুর বাড়ি কুমড়াবাদ। সে গিয়েছিল ইট পাড়তে। বর্ধমানের পারজনা গ্রামে। তাদের গোটা গ্রাম ইট পাড়ার কারিগর। ভাটা সাজিয়ে তাতে আগুন দিয়েই ফিরছে গ্রামে। কারণ তাদের ভোটেই দেশের কারিগর গড়ে উঠবে। কিন্তু বাদ সেজেছে পুলিশ। মাঝে মাঝে তাঁদের বাসের ছাদ থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। সুযোগ বুঝে বাসের কন্ডাক্টররা বাড়তি ভাড়া চাইছে। কারমিদা গ্রামের লক্ষীরাম মুর্মু বললেন, “আমরা ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী থেকে বাংলার আদিবাসীরা একটি দলকেই ভরসা করছি। আশাকরি সেই দল দেশে ক্ষমতায় এলে সিউড়িতে এই দেশ খাটতে যাওয়া শ্রমিকদের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা করবে। কারন ঝড় জলের দিনে এভাবে বাসের ছাদে ছেলে পুলে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তখনই কমবে যদি শহরে বা শহরের বাইরে আমাদের একটা থাকার ছাদ থাকে। না হলে অগত্যা বাদুর ঝোলা হয়ে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের টানে ফিরতে হবে। ভোট বলে কথা।”
[বারুইপুরে পুলিশের নাকা চেকিং, প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা-সহ গ্রেপ্তার পাঁচ বিজেপি নেতা]
ছবি: শান্তনু দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.