দীপঙ্কর মণ্ডল, সাগর: দীর্ঘ লকডাউন পার করে সাগরে ফিরলেন ইমারত কর্মীরা। ছয় মাস পর অন্ধপ্রদেশ নিজেদের জন্মস্থানে ফিরে স্বস্তির শ্বাস নেবেন বলে ভেবেছিলেন শ্রমিকেরা। কিন্তু আমফানের রাক্ষুসে গ্রাসে হারিয়েছে ভিটেমাটি, শেষ সম্বলটুকু। ভিন রাজ্য থেকে ফিরে এক নয়া লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিলেন তাঁরা।
শুনশান কচুবেড়িয়া ঘাট। দুপুরের গনগনে রোদে নৌকাটি ভিড়ল ঘাটে। কাঠের পাটাতন বেয়ে নেমে আসছে শ্রমিকের দল। অনেকদিন পর বাড়ি ফিরলে যে হাসি লেগে থাকে ঠোটের কোণে, তা নেই শ্রমিকদের মুখে। জন্মস্থানে পা দিয়ে আমফানের ধ্বংসলীলা দেখে ছলছল করে উঠল তাদের চোখ। জিজ্ঞাসু চোখে শেষ সম্বলের কতটুকু আর অবশিষ্ট আছে তা জানতে চান তারা। কারো পিঠে ভারি ব্যাগ। কারও বা মাথায় বড়োসড়ো বস্তা। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ঘরে ফেরার পর দুঃসহ স্মৃতিটুকু ভাগ করে নেওয়ার আগেই ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সব। লকডাউনের ঘা শুকিয়ে ওঠার আগেই তাতে আরও ব্যথা দিয়ে গেছে আমফান। আস্ত নেই ভিটের গাছ বা বাড়িটুকু। পড়ে আছে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন। মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত অসহায় মানুষগুলো ভাবছেন কোথা থেকে শুরু করবেন। নির্মাণকর্মী রতন দাস জানান, “হায়দরাবাদ থেকে ৫০ আসনের বাস ভাড়া করতে হয়েছে। একটা করে সিট ফাঁকা রেখে ২৫ জন এসেছি। সে রাজ্য, এ রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার, কেউ এক পয়সা দেয় নি।” সেই কথারই রেশ টেনে অপূর্ব বেজ জানালেন, “দুমাস কাজ নেই। মালিক একটা টাকাও দেয় নি। একবেলা খেয়ে থেকেছি। তবে এখানে এসে যা দেখছি সব নতুন করে শুরু করতে হবে। এখন কি যে খাব জানিনা।” কিছু শ্রমিকেরা আবার বাড়ির পাশে থাকা পানের বরজ দেখেও কেঁদে ফেললেন ভিটেতে দাঁড়িয়ে। আমফানের গতিবেদ উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তছনছ করেছে পানের বরজ।
একটু বেশি অর্থ উপার্জেনর জন্য ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে দিনের পর দিন না খেয়ে শেষে বাড়ি ফিরেছেন তারা। তাই এবার থেকে যাই হোক আর ভিন রাজ্যে যাবেন না বলেই স্থির করে নেন সর্বস্বান্ত শ্রমিকেরা। ৬ মাস পর বাড়ি ফিরে মাথার গামছাটি খুলে মুখ মুছলেন এক প্রৌঢ়। বিড়বিড় করে বললেন, “দুমাস বাজারে পান যায়নি। মেদিনীপুরের মেচেদায় বেচতে যেতাম। আর হয়তো কখনো সাগরদ্বীপের বাইরে যাবনা। এখানেই না খেয়ে মরতে হবে।” একরাশ হতাশা তখন বেরিয়ে এল প্রৌঢ়ের দীর্ঘ নিঃশ্বাসে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.