সুব্রত বিশ্বাস: মুম্বই স্টেশন হোক বা হাওড়া, যাত্রীদের সাহায্যে সর্বদাই এগিয়ে রেল। লকডাউনে কোথাও পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Workers) বাড়ি ফেরাতে অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন রেলের জিআরপি। কোথাও আবার শ্রমিকের ছোট্ট শিশুর জুতোর লেস বেঁধে স্নেহের পরশ দিয়েছেন রেলের টিকিট পরীক্ষক। ফলে দেশের এই বিপুল পরিমাণে পরিযায়ী শ্রমিকেরা যে রেলের কাছে ব্রাত্য নন সেই ছবিটা কার্যতই স্পষ্ট।
পরিযায়ীদের দুর্দশা দেখে বহু ক্ষেত্রে সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে রেল। তাই পরিবহনেরও প্রধান মাধ্যম হিসেবে কেন্দ্রই রেলের হাতে তুলে দিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর গুরুদায়িত্ব। শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের মাধ্যমে একদিকে রেল পরিযায়ীদের বাড়ি ফেরাচ্ছেন। অন্যদিকে রেল বিভিন্ন জোনে ভাগ করে ভিন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের মুখে দুবেলা অন্ন তুলে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছে। রোজই প্রায় লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্ন জোগান দেয় ভারতীয় রেল। লকডাউনের মাঝে রেলের ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠার এমন বহু চিত্র বার বার উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। শুক্রবার মুম্বই স্টেশনে ভারী ব্যাগ বয়ে নিয়ে চলার সময় জুতোর লেস খুলে যায় এক কিশোরের। ভারী ব্যাগ সঙ্গে থাকায় কোনওক্রমে ট্রেনের কামরার দিকে এগিয়ে চলেছিল সেই কিশোর। কিন্তু সেই সমস্যা নজর এড়ায়নি কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষকের। করোনাতঙ্ককে দূরে ঠেলে সেই কিশোরের জুতোর লেস বেঁধে দেন তিনি। দিল্লি থেকে হাওড়া এসে বিপাকে পড়া চোদ্দো জন আদিবাসী শ্রমিককে টিকিট কেটে বাড়ি ফেরান হাওড়া জিআরপির পুলিশ কর্মীরা। এভাবেই বার বার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রেল ও তার কর্মীরা।
লকডাউনের মধ্যেই পনেরো জোড়া রাজধানী এক্সপ্রেসকে স্পেশাল তকমা দিয়ে চালানো শুরু হয়। পয়লা জুন থেকে শুরু হয় একশো জোড়া ট্রেনের চলাচল। ফলে বন্ধ করার মুখে চলে আসে শ্রমিক ট্রেন। রেলকর্তাদের কথায়, “ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় বন্ধ করা হবে শ্রমিক ট্রেন।” ১ মে থেকে ৩৩ দিনের এক পরিসংখ্যান দিয়ে রেল জানিয়েছে যে, ৪১৫৫টি শ্রমিক ট্রেন যাত্রা করেছে বিভিন্ন রাজ্যে। ৫৭ লক্ষ শ্রমিক বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছেন। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ট্রেন ছেড়েছে গুজরাট থেকে, ১০২৭টি। মহারাষ্ট্র থেকে ৮০২টি, পাঞ্জাব থেকে ৪১৬টি, উত্তরপ্রদেশ থেকে ২৮৮টি, বিহার থেকে ২৯৪টি। ভিন রাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক ট্রেন আসে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে। ১৬৭০টি ট্রেন বিভিন্ন প্রদেশ থেকে উত্তরপ্রদেশে আসে। বিহারে আসে ১৪৮২টি, ঝাড়খণ্ডে ১৯৪টি, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আসে যথাক্রমে ১৮০ ও ১৩৫টি।
তবে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত আসা শ্রমিক ট্রেনের সংখ্যা একশো চল্লিশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় সীমাহীন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ভিন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকেরা ফেরায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে বলেই জানা যায়। স্বাস্থ্য বিধি না মানায় সংক্রমণের জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের দিকেও আঙুল তোলা হয়েছে। তবুও বাদ পড়েনি শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন। শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতেও রেলের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে রাজ্য সরকার। মানবিতার সঙ্গে তাঁদের পাঠানো হয়েছে বাড়িতে। তাঁদের বোঝানো হয়েছে যে, তাঁরা ব্রাত্য নন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.