কল্যাণ চন্দ, বহরমপুর: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা CAA-কে হাতিয়ার করে মুর্শিদাবাদের ২০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ওড়িশার (Orissa)ভদ্রক থেকে তাড়ানোর অভিযোগে কাঠগড়ায় বিজেপি। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা দীর্ঘদিন ধরে পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant labourers)জন্য কাজ করা সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘‘গত ২৪-২৫ বছর ধরে ওড়িশার ভদ্রকে ফেরিওয়ালার কাজ করে চলা সুতি ও সামশেরগঞ্জের ২০ জন পরিযায়ী শ্রমিক ‘সিএএ’ চালুর পর থেকেই নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছেন। তাঁদের মারধর করছে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। মুর্শিদাবাদ জেলার আধার কার্ড, রেশন কার্ড থাকা সত্বেও ‘বাংলাদেশি’ বলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ বৃহস্পতিবার বহরমপুরে বিতাড়িত সেই শ্রমিকরা ফিরে নিজেরাই তাঁদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
ওড়িশা থেকে ফেরা শ্রমিকদের কথায়, আচমকাই তাঁদের রীতিমতো জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। বলা হয়, ‘‘তুমি ভারতীয় না বাংলাদেশি (Bangladeshi) ? দেখি তোমার আধার কার্ড।’’ আর তারপরই রীতিমতো ফরমান জারি করা হয়,‘‘ওহ! মুর্শিদাবাদ। মানে বাংলাদেশি!’’ এর পরই চলে চড়-থাপ্পড়, ব্যাপক মারধর। কারও সারা শরীরে এখনও ব্যথা। শেষমেশ ‘বাংলাদেশি’ তকমা নিয়েই ওড়িশা ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা। তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ এদিন বলেন, ‘‘এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। বিজেপি নেতারা বাংলাদেশি বলে CAA-র ভয় দেখিয়ে অত্যাচার করছে, নির্যাতন করছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে মিথ্যাচার করে বিপদ ডেকে আনছে।’’
বৈধ আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও গত ১৯শে মার্চ ওড়িশায় ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) হস্তক্ষেপ করে ওই ২০জন পরিযায়ী শ্রমিককে উদ্ধার করেন। বৃহস্পতিবার বহরমপুরের একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে হাজির হন রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। সামিরুল বলেন, ”সুতি-শামসেরগঞ্জের ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ওড়িশার ভাড়া বাড়িতে গিয়ে আধার কার্ড দেখতে চেয়ে হুমকি দিয়ে মারধর করে সেখানকার কয়েকজন বিজেপি কর্মী। মাত্র দুঘন্টার মধ্যে তাঁদের উদ্ধার করে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই শ্রমিকরা মুর্শিদাবাদে ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ গড়ে তুলেছেন।” তাঁদের সঙ্গে রয়েছে রাজ্য সরকার বলে জানান রাজ্যসভার সাংসদ।
অন্যদিকে পরিযায়ীদের বিষয়ে শামসেরগঞ্জের মহিষাস্থলির সালামত শেখ বলেন, ”মারধর খেয়ে বাধ্য হয়ে তাঁরা বাড়ি পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাঁদের ব্যবসার মালপত্র পড়ে রয়েছে ওড়িশার ভদ্রক এলাকায়। তাই ফের তাঁরা সেই রাজ্যে যেতে চান। কিন্তু প্রাণের ভয় পাচ্ছেন।” অন্যদিকে সুতি ব্লকের সফিকুল শেখ জানান, দীর্ঘ বছর ধরে তিনি ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করে আসছেন। কিন্তু এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। হঠাৎ কেন বাংলাদেশি বলে তাড়িয়ে দেওয়া হল, কিছুই বুঝতে পারছেন না তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.