সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: লকডাউন চলায় লুকিয়ে অন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে নদী পেরিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার একদল পরিযায়ী শ্রমিক। ওই দলে ছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা, তাঁর স্বামী এবং দুই শিশুসন্তান। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে নদীপথে ডায়মন্ড হারবারে আসেন তাঁরা। রিলিফ ক্যাম্পে থাকাকালীন ওই অন্তঃসত্ত্বা প্রসব যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন। প্রশাসনের কর্তাদের উদ্যোগেই হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। সেখানেই এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মহিলা ওই শ্রমিক। মা ও সদ্যোজাত দু’জনেই এখন সুস্থ।
করোনা আতঙ্কের মাঝেও খুশিতে ডগমগ শাহিদুল আর আমিনারা। উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালির বাসিন্দা এই দম্পতি তাঁদের আরও দুই পুত্র ও কন্যাকে নিয়ে লকডাউনের আগেই গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে ইঁটভাঁটায় কাজ করতে। লকডাউনের জেরে বন্ধ হয় ইঁটভাঁটা। কাজ হারিয়ে ইঁটভাঁটার অন্য শ্রমিকদের সঙ্গেই লুকিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরাও। সাত শিশু ও তিন মহিলা-সহ এক প্রবীণ শ্রমিকও ছিলেন তাঁদের দলে। সকলেই উত্তর চব্বিশ পরগনার মিনাখাঁ ও সন্দেশখালির বাসিন্দা।
গত ২৬ এপ্রিল ওই ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে নদীপথে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ডায়মন্ড হারবারে এসে পৌঁছন শাহিদুল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আমিনারা ও তাঁদের দুই সন্তান। নদীর ঘাটে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসায় তাঁরা ওই শ্রমিকদের আটকান। নিয়মমাফিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁদের আশ্রয় দেওয়া হয় ডায়মন্ড হারবারের আইটিআই কলেজের রিলিফ ক্যাম্পে। ৩ মে আমিনারা বিবির প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা খবর পাওয়ামাত্রই প্রসূতি ওই মহিলাকে তড়িঘড়ি ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভরতি করেন। সেখানেই ফুটফুটে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন আমিনারা বিবি।
দু’জনেই সম্পূর্ণ সুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবারই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় মা ও সদ্যোজাতকে। প্রশাসনের উদ্যোগেই ফের ওই রিলিফ ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনা হয় দু’জনকে। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসক সুকান্ত সাহা শুক্রবার রিলিফ ক্যাম্পে মা ও তাঁর সদ্যোজাত শিশুপুত্রকে দেখতে যান। তিনি আমিনারা বিবির হাতে তুলে দেন পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী ও ছোটদের নতুন জামাকাপড়। আশীর্বাদ করেন শাহিদুলের পরিবারের নতুন সদস্যটিকেও। মহকুমা শাসক জানিয়েছেন, রিলিফ ক্যাম্পে আটকে থাকা ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রশাসনিক উদ্যোগে শীঘ্রই তাঁদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো হবে। মহকুমা প্রশাসনের এহেন উদ্যোগে নিজেদের কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন শাহিদুল-আমিনারা তো বটেই, অন্যান্য শ্রমিকরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.