সুমিত বিশ্বাস,পুরুলিয়া: শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীকে ফিরিয়ে দিয়েছে একের পর এক হাসপাতাল। কারণ একটাই – করোনা আতঙ্ক। আর তাতেই লকডাউনে মুম্বইয়ে আটকে পড়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। পরে সেখানকার একটি হাসপাতাল ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই প্রাণ হারিয়েছেন ওই শ্রমিক। মৃত বছর তিরিশের সুদর্শন মান্ডি। পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের লাকড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাকবিড়রার বাসিন্দা।
জানা গিয়েছে, তিনি মুম্বাইয়ের ভিওয়ান্ডির একটি হোটেলে কাজ করতেন। লকডাউনের পর সেখানেই আটকে পড়েন, বাড়ি ফিরতে পারেননি। গত শুক্রবার সকাল থেকে সুদর্শনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন তাঁর গ্রামের তিন বন্ধু তথা সহকর্মী একটি বাইকে চাপিয়ে প্রায় ২০ কিমি দূরে ভিওয়ান্ডির আশা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখেন বলে অভিযোগ। পরে তাঁরা চিকিৎসার আরজি জানালে তাতে কর্ণপাত না করে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা থানে এলাকার শিবাজি হাসপাতালে সুদর্শনকে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানেও নিরাশ হতে হয়। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে প্রায় সন্ধে হয়ে যায়। পরে সেখান থেকে ভিওয়ান্ডির ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সুদর্শনের সঙ্গে একই হোটেলে কাজ করা আরেক শ্রমিক, বাণেশ্বর মাহাতো বলেন, “মুম্বইয়ে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কেই এখানকার দুটি হাসপাতাল আমাদের বন্ধুকে ফিরিয়ে দেয়। ফলে শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে থাকলেও কোনও চিকিৎসা পায়নি। চিকিৎসা পেলে এই ঘটনা ঘটত না।”
মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ সুদূর পুরুলিয়ার পুঞ্চায় পাঠানোর চেষ্টা করেন তাঁর সহকর্মীরা। কিন্তু ব্যর্থ হন। অ্যাম্বুল্যান্স সাড়ে তিন লক্ষ টাকা হাঁকানোয় মরদেহ সেখানেই দাহ করতে বাধ্য হন সুদর্শনের সহকর্মীরা। পুঞ্চার পাকবিড়রা গ্রামের মোট ৭২ জন ভিওয়ান্ডিতে কর্মরত। তাঁদের মধ্যে কেউ কাজ করেন হোটেল, কেউ ওষুধ বা কাপড়ের দোকানে।
বঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকের এই মর্মান্তিক পরিণতির পর তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে লাকড়ার অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই এলাকার বাসিন্দা তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ওই পরিবারের পাশে আছি। ওই পরিবারকে সবরকমভাবে সাহায্য করা হবে।” কিন্তু ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে, চিকিৎসার অভাবে বাড়ির ছেলের এই মৃত্যু যেন কিছুতেই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না পরিবার। শোকে কাতর স্বজনরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.