বাবুল হক, মালদহ: টানা ৪৮ ঘণ্টা ট্রেনের কামরায় পেটের যন্ত্রণায় কাতরালেন মালদহের এক পরিযায়ী শ্রমিক। কিন্তু শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে তাঁর চিকিৎসার জন্য কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ। অবশেষে ট্রেনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওই শ্রমিক। এ নিয়ে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে মৃত্যু হল মালদহের মোট তিন পরিযায়ী শ্রমিকের। এবার কেরল থেকে ফেরার পথে ট্রেনেই প্রাণ হারান মালদহের পুখুরিয়ার সাতাশ বছরের যুবক খতিব শেখ। করোনা সংক্রামিত হয়ে মৃত্যু কি না, তা পরিষ্কার নয়। যদিও মৃত শ্রমিকের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে রেল পুলিশ। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
মৃত শ্রমিকের পরিবারের অভিযোগ, দু’দিন ধরে অসহ্য পেটের যন্ত্রণায় ট্রেনের মধ্যেই কাতরাচ্ছিলেন খতিব শেখ। তবু ট্রেনটি কোথাও থামেনি। চিকিৎসা পরিষেবা মেলেনি। অবশেষে চিকিৎসার অভাবে তিনি মারা যান। মঙ্গলবার সকালে মালদহ টাউন স্টেশনে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনটি পৌঁছনোর পর রেলপুলিশ দেহ উদ্ধার করে। জানা গিয়েছে, মৃত খতিব শেখের বাড়ি মালদহের পুখুরিয়া থানার চাঁদপুর গ্রামে। প্রায় চার মাস আগে কেরলের কায়কলম এলাকায় রাজমিস্ত্রির সহকারি শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে গিয়েছিলেন খতিব শেখ এবং তাঁর এক খুড়তুতো ভাই মতিন শেখ। লকডাউনের জেরে তাঁরা কেরলে আটকে ছিলেন। মালদহে ফেরার জন্য ৬ জুন কেরলের কায়কলম জংশন থেকে তাঁরা শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে ওঠেন। কিন্তু ট্রেনেই পথেই মৃত্যু হয় খতিব শেখের।
মৃতের খুড়তুতো ভাই মতিন শেখ বলেন, “দাদার সঙ্গে আমিও কেরল থেকে ট্রেনে করে ফিরছিলাম। ৬ জুন রাত ৮ টায় আমরা কেরলের কায়কলম জংশন থেকে ট্রেন ধরি। ৭ জুন সকাল থেকেই দাদার পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। ৪৮ ঘন্টার বেশি সময় ধরে দাদা পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। ঘনঘন শৌচাগারেও যান। বমি, পেট খারাপও হয়েছিল। ট্রেন কোথাও থামেনি। যার ফলে চিকিৎসা মেলেনি। সোমবার রাতে দাদা পেটের যন্ত্রণায় ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকেন। এরপর আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। মঙ্গলবার সকালে মালদহ টাউন স্টেশন ঢোকার মুখে দাদাকে যখন ডেকে তুলি, কোনও সাড়া পাইনি। বুঝতে পারি, দাদার মৃত্যু হয়েছে।”
জানা গিয়েছে, মৃত খতিব শেখের পরিবারে স্ত্রী লাকি বিবি, ছয় এবং চার বছর বয়সি দুই ছেলে রয়েছে। স্বামীর রোজগারে চলত সংসার। কিন্তু এখন তাঁরা অসহায়। আর্থিক সাহায্যের দাবি জানিয়েছে পরিবার। উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরই জানা যাবে। আমরা অসহায় ওই শ্রমিকের পরিবারের পাশে থাকব।” অন্যদিকে, রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ মৌসম নূর বলেন, “রেলের উদাসীনতার কারণে মালদহের তিনজন শ্রমিক পরপর প্রাণ হারালেন। ট্রেনে অসুস্থ যাত্রীদের কোনওরকম পরিষেবা মিলছে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.