রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: কাজ সংক্রান্ত চুক্তি করতে গিয়ে আলাপ, প্রেম। দেখতে দেখতে সাত বছর পার। এবার অগ্নিসাক্ষী রেখে, সাত পাকে ঘুরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। এটাই চিনের গুয়াংজির জিয়াকি এবং পূর্ব মেদিনীপুরের পিন্টুর প্রেমকাহিনি। তবে দু’দেশের এই প্রেমিকযুগলের চার হাত এক হওয়ার সাক্ষী থাকতে পারল না জিয়াকির পরিবার। কারণ একটাই, করোনা ভাইরাস। তাই চিন থেকে ভারতে এসে মেয়ের বাড়ির সাক্ষী থাকতে পারলেন না তাঁরা। করোনা এভাবেও ছোবল মেরেছে চিনবাসীকে।
সালটা ২০১৩। নিজের কাজে চিন গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পিন্টু। তা ছিল ব্যবসা সংক্রান্ত চুক্তির কাজ। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় জিয়াকির। ব্যবসায়িক স্বার্থ আদানপ্রদান তখন পৌঁছে গিয়েছে হৃদয় বিনিময়ে। একে অপরকে মন দিয়ে বসেছেন পিন্টু-জিয়াকি। প্রতিবেশী দেশের দুই নরনারীর পথচলা শুরু সেই থেকে। এরপর গঙ্গা-হোয়াংহো দিয়ে বয়ে গিয়েছে কত জল! পিন্টু বা জিয়াকি কেউ কারও সঙ্গ ছাড়েননি। দূরত্বও কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
২০২০তে পা রেখে ওঁরা চার হাত এক করার সিদ্ধান্ত নিলেন। পিন্টুর বরাবরের ইচ্ছে ছিল, বিয়েটা হোক তাঁর মেদিনীপুরের পারুলিয়ায়, গ্রামের বাড়িতে। সেইমতো পরিকল্পনা করা হয়। বুধবার বসেছিল বিয়ের আসর। লাল বেনারসি, চেলি, কপালে চন্দন, মাথায় টিকলি, গলায় রজনীগন্ধা মালা আর মুখ পানপাতায় ঢেকে ছাদনাতলায় হাজির হলেন জিয়াকি। সে এক অন্যরকম দৃশ্য। বাঙালি বর আর বঙ্গনারীর বেশে চিনা যুবতীকে দেখে তখন উপস্থিত সকলে মুগ্ধ। শাঁখ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত গোটা এলাকা। শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সিঁদুরদান সবই হল খাঁটি হিন্দু শাস্ত্র মেনে।
কিন্তু এমন মিলনমধুর সন্ধ্যায়ও বিচ্ছেদবেদনা! নতুন জীবনে প্রবেশের এই সুন্দর মুহূর্তে নিজের প্রিয়জনদের কাছে পেলেন না জিয়াকি। চিন থেকে তাঁর মা,বাবা আসবেন কীভাবে? ওখানে যে থাবা বসিয়েছে করোনা ভাইরাস, যার দংশনে প্রাণ হারাচ্ছেন একের পর এক বাসিন্দা। রুদ্ধ চিনের দরজা। যাতায়াত একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই গুয়াংজি থেকে মেদিনীপুর এসে পৌঁছতে পারেননি কেউ।
তাহলে কি বিয়ে সেরে চিনে ফিরে যাবেন? এই প্রশ্নের জবাবে জিয়াকি বলেন, “আমরা ফিরে তো যাবই, কিন্তু কখন যেতে পারব জানি না। সবকিছু মিটে গেলে, ওখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা ওখানে গিয়ে রেজিস্ট্রি এবং বাকি সব কিছু শেষ করব।” তিনি এও জানান যে বিয়ের খবর পেয়ে খুব খুশি তাঁর পরিবার। নবদম্পতিকে তাঁরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নিজেরা সুস্থ আছেন বলেও খবর পাঠিয়েছেন, যাতে বিয়ের পিঁড়িতে বসা মেয়ে কোনও চিন্তা না করে। পিন্টুর কথায়, “আমরা এখানে, এই রাজ্যেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জিয়াকির পরিবার বিয়েতে আসতে পারেনি। পরে চিনে গিয়ে আমাদের আরও একটি অনুষ্ঠান করতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.