ছবি:সুকান্ত চক্রবর্তী।
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: একই পাড়ার মেয়েকে বিয়ে কেন? মেয়ে ফেরত দাও নাহলে একঘরে হও৷ ঘাটাল শহরের এক সদ্য বিবাহিত দম্পতির জন্য এমনই ফতোয়া জারি হয়েছে৷ পরিবারটি প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে ঘাটাল পুরকর্তৃপক্ষ, মহকুমা শাসক ও পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে৷ মোড়লদের ফতোয়ায় আতঙ্কে পরিবার৷ তাঁদের একমাত্র রোজগারের উৎস মুদির দোকানটি বন্ধ হওয়ার মুখে। চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা৷ পরিবারটির অভিযোগ, গত সেপ্টেম্বরে প্রশাসনের কাছে দরবার করা হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিযুক্ত মোড়লরা৷ ঘাটালের মহকুমা শাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “বিষয়টি পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে৷ আবার বলব৷ ” ঘাটাল থানার পুলিশ তদন্তে নেমেছে বলে জানা গিয়েছে৷
জানা গিয়েছে, গত ২৯ আগস্ট ঘাটাল পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নিশ্চিন্দিপুর এলাকার বাসিন্দা চন্দন দোলুই ওই গ্রামেরই যুবতী সুপর্ণা বাগকে বিয়ে করেন৷ বিয়েতে আপত্তি ছিল পাড়ার মোড়লদের৷ তাদের দাবি, একই পাড়ার মেয়েকে বিয়ে করা চলবে না৷ এমনকী, মেয়ের বাবা-মা এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে৷ বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়৷ পাত্র-পাত্রীর বয়স সংক্রান্ত নথি দেখে অবশ্য বিয়েতে হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি পুলিশ৷ কিন্তু গ্রামে মাতব্বরবা সালিশি সভা বসায় বলে অভিযোগ৷ সেই সালিশি সভায় ফতোয়া জারি হয়, একই পাড়ার মেয়েকে বিয়ে করা চলবে না৷ ওই মেয়ে ফেরত দাও৷ নয়তো গোটা পরিবারকেই বয়কট করা হবে৷ যদিও সালিশি সভার আসরে দাঁড়িয়ে সদ্য বিবাহিতা সুপর্ণা বাগ বলেছিলেন, ‘আমি এই ফতোয়া মানি না৷ যাঁকে বিয়ে করেছি তাঁর বাড়িতেই থাকব৷’ ফলে পরিবারটি একঘরে করা দেওয়া হয়৷
চন্দনের বাবা অজিত দোলুইয়ের একটি মুদি দোকান রয়েছে৷ মোড়লদের ফতোয়া জারি হওয়ার পরে গ্রামের কেউই ওই দোকান থেকে মুদির দ্রব্যাদি কিনছেন না। ধোপা, নাপিত বন্ধ। অজিতবাবু বলেন, “তা আমরা একঘরে হয়ে পড়েছি৷ কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন না। বাড়ির লক্ষ্মী পুজোয় ব্রাহ্মণকেও আসতে দেওয়া হয়নি৷ বাইর থেকে পুরোহিত এনে পুজো করতে হয়েছে৷ আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে বলে গিয়েছে, ছেলে বউমাকে বাড়িতে রাখা চলবে না৷ রাখলেই দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে৷ এই সিদ্ধান্ত আমরা মানতে পারিনি৷ তারপর থেকে আমরা একঘরে হয়ে দিনযাপন করছি৷ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি৷ ”
কী বলছেন পুর কর্তৃপক্ষ? ঘাটাল পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন মালিক বলেন, “ এ যুগে এসব আর চলবে না৷ যেহেতু ছেলে মেয়ে দু’জনেই সাবালক , তাই এখানে কারও ফতোয়া চলবে না৷ দু’পক্ষকে ডেকে পাঠানো হবে৷” কেন ফতোয়া? কী বলছেন মোড়লরা? অন্যতম অভিযুক্ত পাঁচুগোপাল দোলুই বলেন, “ একই পাড়ার মেয়েকে বিয়ে করলে পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়৷ এরপর আরও অনেকে এভাবে বিয়ে করতে চাইবে৷ কী হবে ভেবে দেখুন? তাই আমরা সালিশি বসিয়ে মেয়েকে তাঁর বাড়িতে যেতে বলেছি৷ পাড়ার নিয়ম মেনে আমরা সবা মিলে বসে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এতে অন্যায়টা কিসের?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.