সম্যক খান, মেদিনীপুর: বৃষ্টির জল সংগ্রহের পরিকল্পনা না থাকলে এবার থেকে আর মিলবে না বাড়ি তৈরির অনুমোদন। চলতি মাসের ১ আগষ্ট থেকেই এই নিয়মই লাগু করল মেদিনীপুর পুরসভা। যাঁরা আগে বাড়ির নকশা জমা দিয়েছেন, তাঁদেরও অতিরিক্ত নকশা দাখিল করতে হচ্ছে। পুরসভার প্রশাসক তথা সদর মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, ভূগর্ভে জলস্তর দ্রুত নামছে। তাই জল বাঁচাতেই এই প্রয়াস। আপাতত তিনটি মডেলও তৈরি করে রাখা হয়েছে বাড়ি মালিকদের সুবিধার্থে। প্রয়োজনে এবিষয়ে পুরসভার সাহায্যও নিতে পারেন তাঁরা।
“জল বাঁচান, জীবন বাঁচান”-এই স্লোগানকে বাস্তবায়িত করতেই এবার এগিয়ে এসেছে মেদিনীপুর পুরসভা। জলের অপচয় বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই জনসচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টাও চলছে সর্বত্র। সারা বিশ্বজুড়ে আগামী দিনে জলসংকট দেখা দিতে চলেছে। তাই প্রতিটি মানুষ সচেতন না হলে গোটা সমাজ সংকটে পড়বে। তাই ইতিমধ্যেই চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, রাজস্থান,দিল্লিতে জলের সংকট নিয়ে সচেতনতা জারি হয়ে গিয়েছে। প্রতিনিয়ত যে হারে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে আগামীদিনে সংকট সৃষ্টি হতে বাধ্য। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের ইঞ্জিনিয়র অমিয় সামন্তের মতে, মূলত ভূগর্ভস্থ জলের উপরই নির্ভর করে রয়েছে মেদিনীপুর জেলা। এখানে অন্যকোনও উপায়ে জলধারণের ব্যবস্থা নেই। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর ৬৩৪ বিলিয়ন মিটার কিউব জল ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্ষার জল ভূগর্ভের সঙ্গে মেশে মাত্র ৪৩৩ বিলিয়ন মিটার কিউব। যে পরিমাণ জল উত্তোলন হয় তার মধ্যে আবার ৮৯ শতাংশই সেচের কাজে ব্যবহার হয়। পানীয় জলের জন্য ব্যবহার হয় ৯ শতাংশ। আবার প্রতি দশ বছর অন্তর প্রায় ১৫ শতাংশ করে জল উত্তোলনের পরিমানও বাড়তে থাকে। যেভাবেই হোক বৃষ্টির জলকে ধরে ভূগর্ভে না পাঠাতে পারলে পরিস্থিতি আগামীদিনে ভয়ংকর হবে বলেই মনে করছেন ভূবিদরা। সেই ধারণারই বাস্তবায়ন ঘটাতে এগিয়ে এসেছে মেদিনীপুর পুরসভা।
বিশেষ করে যে সব ফ্ল্যাটবাড়ি বা বহুতল নির্মাণ হচ্ছে সেগুলিতে পুরোদস্তুর রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসাতেই হবে। যেখানে বর্ষার জল ধরে রেখে তা শোধন করে আগামী তিনমাস তা ব্যবহারও করতে পারবেন বাসিন্দারা। কেবলমাত্র পানীয় জল বাদে বাকি সব কাজেই ব্যবহার করা যাবে পরিশোধিত ওই জল। পুরসভা প্রশাসক দীননারায়নবাবু বলেছেন, তিন ধরনের মডেল তাঁরা জনগনের সুবিধার্থে তৈরি করে রেখেছেন। ফ্ল্যাট বা বহুতলের ক্ষেত্রে পুরোদস্তুর যে রেইনওয়াটার হার্ভেষ্টিং ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসবে তার জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হবে। মাঝারি মডেলও আছে। যারা দ্বিতল বা ত্রিতল বাড়ি তৈরি করছেন তাদের জন্য ওই মাঝারি মডেলে খরচ পড়বে প্রায় ১ লাখ ২০হাজার টাকা। এছাড়াও যারা একতলা বাড়ি তৈরি করবেন তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসাতে হবে না। সেক্ষেত্রে বর্ষার জলকে একত্রিত করে ভূগর্ভে রিচার্জ করতে হবে। ওই রিচার্জ মডেলের জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। আগষ্ট মাসের প্রথম দিন থেকে তা চালুও হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ি অনুমোদনও পেয়ে গিয়েছে নয়া নিয়মে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.