Advertisement
Advertisement

স্কুলেই বাগান করে পড়ুয়াদের বিশল্যকরণী চেনাচ্ছেন এই শিক্ষক

শিক্ষকের এই উদ্যমকে কুর্নিশ জানিয়ে আসছে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার।

Midas touch of teacher brings life to Birbhum School
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 22, 2017 7:42 am
  • Updated:October 4, 2019 4:55 pm  

নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মহাকাব্যে বিশল্যকরণীর স্পর্শে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল লক্ষ্মণ। আর বর্তমানে বিশল্যকরণীর ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিদ্যালয়। পুরাণে বিশল্যকরণী চিনতে না পেরে গোটা গন্ধমাদন পাহাড়টাই তুলে নিয়ে এসেছিল হনুমান। কিন্তু বর্তমানে স্কুলের ভেষজ উদ্যানে চার রকম বিশল্যকরণী পড়ুয়াদের চেনাচ্ছেন কল্যাণ ভট্টাচার্য। তিনি বীরভূমের কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। নিজের উদ্যোগে স্কুলের পতিত জমিতে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুতের বর্জ্য ছাই ফেলে তৈরি করেছেন উদ্যান। সেই উদ্যানেই আনা হয়েছে বিশল্যকরণী। এছাড়া শুরু হয়েছে কেঁচো চাষ। স্কুলের মধ্যে মাছ চাষ করে সেই মাছে মিড ডে মিলের ভোজন। আছে হাতেকলমে মাশরুম চাষের পাঠও। একক কৃতিত্বে স্কুলের এই ভোলবদলে এবারে শিক্ষক দিবসে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাচ্ছেন কল্যাণ ভট্টাচার্য। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রক থেকে সোমবার কল্যাণবাবুর পুরস্কার প্রাপ্তির চিঠি সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লীর বাড়িতে পৌঁছতেই প্রধান শিক্ষককে ঘিরে উচ্ছ্বাস শুরু হয় স্কুলে। কল্যাণবাবু জানান জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কারবাবদ প্রাপ্ত ৫০ হাজার টাকা স্কুলের উন্নয়নেই দান করবেন তিনি।

[দেশ থেকে কার্যত উঠে গেল তিন তালাক, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের]

১৭ বছর আগে যদুরায় স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন কল্যাণবাবু। তার আগে ১৬ বছর চৌহাট্টা স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে পাঁচ বছর আংশিক সময়ের শিক্ষকতাও করেছেন উদ্ভিদবিদ্যার এই ডক্টরেট। যদুরায় স্কুলে যখন কল্যাণবাবু যোগ দেন, তখন পড়ুয়াদের সিউড়ি যাওয়ার প্রবণতা ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে ধরে রাখতে সহশিক্ষকদের সঙ্গে তিনিও উদ্যোগী হন। স্কুল চত্বরের পড়ে খাকা জমি ছাই দিয়ে ভরাট করে সেখানে শুরু হয় আয়ুর্বেদ ভেষজ উদ্যান। কল্যাণবাবুর কথায়, “ভেষজ গাছের সংগ্রহ শুরু হয়। সহ-শিক্ষক থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা যে যেখানে পারে  ভেষজ গাছ জোগাড়ে নেমে পড়ে। বিশল্যকরণীর চলতি রূপ বিষহরি, লাল বিষহরি, কাঁটা বিষহরি ও বার্বেলিনা লুপেলিনা। এই চার রকম বিশল্যকরণীর সংগ্রহ আছে স্কুলে।”

Advertisement

বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিজ্ঞানী গুণীন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কল্যাণবাবু লাল ও কাঁকুড়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই শিক্ষাকে যে উনি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ বাড়তে কাজে লাগিয়েছেন এটাই সব চেয়ে ভাল শিক্ষা।” নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমের উদ্ভিদবিজ্ঞানী সুনীল গুপ্ত বলেন, “বিশল্যকরণী এই বাংলার জলা জমিতেই মিলত। কিন্তু এখন সেটি লুপ্তপ্রায়। স্কুলে সেটি সংগ্রহ করে রাখলে একদিকে ছাত্রদের ওই গাছের সঙ্গে পরিচিতি বাড়বে। অন্যদিকে হাতেকলমে তারা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে পারবে।” স্কুলের শিক্ষকরা জানান, সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সিলেবাসে ছাত্রছাত্রীদের সর্পগন্ধা থেকে অনান্য গাছের পাঠ রয়েছে । পড়তে পড়তে সেটা তারা চোখের সামনে দেখছে। জাতীয় শিক্ষক কল্যাণ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন প্রকৃতির গাছ—গাছড়ার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে। যাতে পরিবেশ থেকেই তারা সুস্থ থাকতে পারে। এবং পরিবেশকে তারা সুরক্ষিত রাখতে পারে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement