ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: মিড-ডে মিলে অনিয়মের জেরে সরকার শাস্তি দিয়েছে। এবার পদক্ষেপ করল তৃণমূল। মিড-ডে মিল নিয়ে কোনও গাফিলতি সামনে এলেই জানানো হোক ‘দিদি’কে। ‘দিদিকে বলো’-তে অভিযোগ জানিয়েই একের পর এক সাফল্য সামনে এসেছে। সে কারণে এই গাফিলতির খবরও জানাতে বলা হল দিদিকে বলো-র দপ্তরে। চুঁচুড়ার স্কুলের ঘটনার জেরে এমন উদে্যাগ নিয়েছে তৃণমূল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
স্কুলের মেনুতে থাকার কথা ভাত, ডাল, সবজি। সঙ্গে কোনও প্রোটিন জাতীয় খাবার। ডিম, মাংস বা নিদেন পক্ষে সয়াবিন। এটাই সরকারি নিয়ম। এর অন্যথা হলেই কড়া শাস্তি। কিন্তু অন্যথা কোথায় হচ্ছে, তা জানা যাবে কীভাবে? সব ক্ষেত্রে সব অভিযোগ সামনে আসে না। কোথাও ভয়, কোথাও যোগাযোগের অভাব থেকে যায়। সবরকম দ্বিধা কাটাতে এবার তাই তার ভারও তুলে দেওয়া হল ‘দিদি’র হাতে। স্কুল কর্তৃপক্ষ, ডিআই অফিস কোথাও কোনও আধিকারিককে আর খুঁজতে যেতে হবে না। পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মিড-ডে মিলে অনিয়ম নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে সরাসরি জানান ‘দিদিকে বলো’-তে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যে ১৫ হাজার বিদ্যালয় রয়েছে। এর আগে এমন বহু ঘটনা ঘটে গিয়েছে। যা সামনে আসেনি। পরে অন্য কোনওভাবে জানা গিয়েছে। তাঁর যুক্তি, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কুল কর্তৃপক্ষর কাছেও জানাতে দ্বিধা করেন অভিভাবকরা। যার জেরে একটা ফাঁকি থেকে যায়। শিশুরা স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।” তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে স্কুলছুট কমানো গিয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন উদ্যোগে সেই সংখ্যা আরও কমানো হবে। কিন্তু তার মধ্যে হুগলির চুঁচুড়ার ঘটনা রীতিমতো বিস্ময়কর।”
চুঁচুড়ার বালিকা বাণীমন্দিরের ছাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক মিড-ডে মিল ছিল স্বপ্ন। তাদের পাতে পড়ত কখনও নুন-ভাত, কখনও ফ্যান-ভাত। সরকারি অনুদান আসা সত্ত্বেও সঠিক মিড-ডে মিল পেত না খুদেরা। এমন ঘোর অপরাধকে যদিও ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন দিব্যেন্দুবাবু। এদিন তৃণমূল ভবনে এ নিয়ে বৈঠকও করেন তাঁর সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে। তার পরই এমন কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, “২০১১-তে মাধ্যমিক দিয়েছে ৯ লক্ষ পড়ুয়া। ২০১৯-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লক্ষে। এর অর্থ, স্কুলছুট কমেছে বলেই এই ফলটা মিলেছে। স্কুলছুট কমার প্রধান কারণ সঠিক মেনু অনুযায়ী মিড-ডে মিল চালু হওয়া। যার অন্যথা একেবারেই বরদাস্ত করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।”
দিদিকে বলো-তে জানিয়ে একাধিক ঘটনায় সুরাহা হয়েছে। কখনও কর্ণাটকে বন্যা কবলিত এলাকায় আটকে থাকা মানুষ উদ্ধার হয়েছে। একাধিক মানুষ চিকিৎসা পেয়েছেন। কিডনির মতো জরুরি অঙ্গর প্রয়োজন ছিল এক শিশুর। এসএসকেএম পারেনি। জোগাড় করে দিয়েছে ‘দিদিকে বলো’-র দপ্তর। এক কৃষক তাঁর কৃষকবন্ধু প্রকল্পের টাকা পেয়েছেন এই দপ্তরে জানিয়েই। এর পরই মিড-ডে মিলের মতো অভিযোগও জানাতে বলা হল দিদিকে বলো-তে। শুধু এই বিষয়টিই নয়, শিক্ষকের বেতন, তাঁদের নিয়োগ, ট্রান্সফার সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে এদিন বৈঠক হয়েছে। জনগণের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, এত সুযোগ-সুবিধা সরকার দিয়েছে। তার পরও গাফিলতি বা ফাঁকি থেকে যেতে পারে। সেই ফাঁকির খবর জানাতেও হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘দিদিকে বলো’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.