Advertisement
Advertisement
মিড-ডে মিল

বিভাজনের জেরে আলাদা হেঁসেল! ধর্মের কাঁটাতারে বিভক্ত খুদেদের মিড-ডে মিলও

ঘটনাটি সুতির আহিরণ গ্রাম পঞ্চায়েতের রামডোবা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের।

Mid day meal cooked and distributed differently to students in Murshidabad

ছবিটি প্রতীকী

Published by: Soumya Mukherjee
  • Posted:September 13, 2019 11:57 am
  • Updated:September 13, 2019 3:29 pm  

শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: ধর্মের বেড়া খাবার পাতেও। এবং খাস শিক্ষাঙ্গনে। যেখানে কিনা কচিকাঁচাদের পুঁথিগত বিদ্যার সঙ্গে ঔদার্য ও মানবিকতার পাঠ দেওয়ার কথা। অথচ কাজে হচ্ছে ঠিক উলটো! অন্তত মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার একটি স্কুলের দৃশ্য তেমনই প্রমাণ দিচ্ছে। দীর্ঘ ন’বছর ধরে সেখানে হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের খুদে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল রান্না হচ্ছে দুটি আলাদা হেঁশেলে! শুধু রান্না নয়, খাবার পরিবেশনও হচ্ছে আলাদা ভাবে, দুই ধর্মের পড়ুয়াদের দুই আলাদা সারিতে বসিয়ে! এতদিন ধরে এই ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।

[আরও পড়ুন: অনুব্রতর সভায় বসে বিজেপি নেতা খুনে অভিযুক্ত ‘ফেরার’ কেরিম খান]

সম্প্রীতির ঘর হিসেবে পরিচিত একবিংশ শতাব্দীর বাংলায় এহেন মধ্যযুগীয় কাণ্ড ঘটছে সুতির আহিরণ গ্রাম পঞ্চায়েতের রামডোবা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে। মোট ৩২৯ জন পড়ুয়ার মধ্যে মুসলিম ১২৪ জন ও হিন্দু ১৯৫ জন। চারজন শিক্ষক ও এক শিক্ষিকা। ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে বসে ক্লাস করে ঠিকই, কিন্তু দুপুরের খাবারের সময় তাদের মধ্যে মাথা তোলে বিভাজন রেখা। হিন্দু হেঁশেল ও মুসলিম হেঁশেলে রান্না করা খাবার আলাদা আলাদা ভাবে বসে মুখে তোলে দুই সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা।

এমন নিয়ম কেন? এতে কি কচিকাঁচাদের মনে ধর্মীয় গোঁড়ামির ভিত মজবুত করে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে না? এই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষকরা পরোক্ষে বল ঠেলেছেন প্রশাসনের কোর্টে। তাঁদের দাবি, ব্লক প্রশাসনের নির্দেশেই এই রীতি চলে আসছে ন’বছর ধরে। এপ্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পশুপতি ঘোষ জানান, কিছু পড়ুয়া সমস্যা সৃষ্টি করায় প্রায় দেড় বছর মিড-ডে মিল বন্ধ ছিল। তারপর ব্লক প্রশাসন ও পরিচালন সমিতির নির্দেশমতো পৃথক রান্নার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এমন অবাঞ্ছিত ব্যবস্থা করতে হল? ওই শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক দীপককুমার দাস জানান, রামডোবা গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা অধিকাংশ মুসলিম। যেখানে বসন্তপুর থেকে আসে মূলত হিন্দুবাড়ির ছেলেমেয়েরা। আগে মিড-ডে মিলের রান্না এক উনুনেই হত, রাঁধতেন মুসলিম মহিলারা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: উত্তপ্ত নানুরে পুড়ে ছাই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি, অভিযোগের তির বিজেপির দিকে]

কিন্তু হিন্দু পড়ুয়ারা বলে দেয়, ওই রান্না তারা মুখে তুলবে না। বছর দেড়েক খায়ওনি। অগত্যা ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়। আর এক শিক্ষক অসীমকুমার দাস জানান, ব্লক প্রশাসন তখন নির্দেশ দেয়, মিড-ডে মিল কোনওভাবে বন্ধ রাখা যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে বসন্তপুর থেকে তিন জন হিন্দু মহিলাকে রাঁধুনি রাখা হয়।

সেটা ২০১০ সাল। সেই ইস্তক একই স্কুলের দুই ধর্মের ছাত্রছাত্রীর জন্য আলাদা রান্না হয়ে আসছে। ‘খুবই দুঃখজনক। রাঁধুনিরাও একসঙ্গে রান্না করতে রাজি নন। সমাজের সামনে কী বার্তা যাচ্ছে, ভেবেই লজ্জা হয়।’-আক্ষেপ করেন বিজ্ঞানের শিক্ষক অসীমবাবু। এর কোনও সুরাহা নেই?

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পশুপতিবাবু বলেন, ‘মিড-ডে মিলে বিভাজন বন্ধ করে একসঙ্গে রান্না ও খাওয়ানোর নতুন নির্দেশ দিয়েছেন বিডিও রবীন্দ্রনাথ বৈরাগ্য। সে নির্দেশ কার্যকর করা হবে।’ যদিও সুতি এক নম্বর ব্লকের বিডিও রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, এই ঘটনার কথা তিনি এই প্রথম শুনলেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা আমার জানা নেই। মাসকয়েক হল দায়িত্ব নিয়েছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলব। তবে যাই হোক না কেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের বিভেদ কোনওভাবে কাম্য নয়।’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement