সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভরা হেমন্তেই শিরশিরানি টের পেয়েছে কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ। “শীত পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।’’- হাওয়া অফিসের কর্তার এহেন বক্তব্যের জেরে আলমারি থেকে চাদর-সোয়েটার বেরিয়ে পড়তেও দেরি হয়নি। শীতের আমেজ পোহানোর জন্য মহানগর যখন সদ্য গুছিয়ে বসেছে, ঠিক তখনই শিরশিরানির পথে বাধা হতে চলেছে নিম্নচাপ। যার জেরে আগামী বুধ-বৃহস্পতিবার বাংলায় বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
আসলে শীত নির্ভর করে উত্তুরে হাওয়ার উপর। উত্তুরে হাওয়ার গতি যত বাড়বে রাজ্যে শীতের দাপটও তত বাড়বে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের জন্য গোঁসাঘরে খিল দেয় উত্তুরে হাওয়া। সমুদ্র থেকে গরম হাওয়া ঢুকে স্থলভূমির উত্তাপ বাড়ায়। এমনই পরিস্থিতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। “আপাতত নিম্নচাপটি অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কা সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে। আগামী ১৫-১৬ নভেম্বর নাগাদ সেটি পূর্ব উপকূলের দিকে সরে আসবে। যার জেরে বাংলার আকাশে মেঘের আনাগোনা বাড়বে। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উপকূলীয় জেলাগুলিতে।” জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই নিম্নচাপের প্রভাবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে রাতের তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা পুরোদস্তুর। ফলে কয়েকদিন ধরে সকালের দিকে যে শিরশিরানি অনুভূত হচ্ছিল, তাতে ছেদ পড়বে। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, নিম্নচাপের প্রভাবে বাতাসের উঁচু স্তরে মেঘ ঢুকছে, যা আকাশকে মেঘলা করবে। পরে নিচুস্তরেও মেঘ ঢুকবে। যার জেরে দিনের তাপ রাতে বেরোতে পারবে না। ফলে বাড়বে রাতের তাপমাত্রা। তবে নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। বস্তুত, অক্টোবর-নভেম্বর মাস বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম। এই সময় নিম্নচাপ হলে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। বছর দু’য়েক আগে ঠান্ডার রথে রাশ টেনেছিল অক্টোবর-নভেম্বরে আন্দামান সাগরে তৈরি দু’টি ঘূর্ণিঝড় ‘হেলেন’ ও ‘লহর’। সেকারণে সাগরের দিকে চোখ রেখেছেন তাঁরা।
এদিন আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.৮ ডিগ্রি। স্বাভাবিকের এক ডিগ্রি বেশি। গত কয়েকদিন ধরে আকাশ পরিষ্কার থাকায় শুকনো হাওয়ার আনাগোনা অব্যাহত ছিল। যার জেরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছিল স্বাভাবিকের আশপাশে। কিন্তু নিম্নচাপ হানা দিলে এক ধাক্কায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেকটা বাড়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আসলে দক্ষিণবঙ্গ এবছর অন্য কারণে চটজলদি শীতের কামড় চাইছে। যেভাবে ভাইরাস—ব্যাকটিরিয়া চোখ রাঙাচ্ছে তাতে ওটাই একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন পতঙ্গবিদ ও ভাইরোলজিস্টরা। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, তাপমাত্রার সঙ্গে ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়ার প্রকোপের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। তাপমাত্রার এক-দু’ ডিগ্রি হেরফেরে জীবাণুর দাপট দু’ থেকে তিনগুণ বেড়ে যায়। আর এ বছর তো বর্ষা দেরিতে বিদায় নিয়ে জীবাণুর প্রাণশক্তি বাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে রোগভোগ বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.