রিংকি দাস ভট্টাচার্য: আশঙ্কা ছিল ভেসে যাওয়ার। কিন্তু যতটা গর্জেছিল, ততটা বর্ষাল না। ভারী বর্ষণের আশায় কার্যত জল ঢেলে পড়শি রাজ্যের দিকে সরল নিম্নচাপ। বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপ এবং তার অবস্থান বদলের প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে। যার জেরে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস শোনা যাচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফে তেমনই ছিল পূর্বাভাস। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্ভাবনা আপাতত কমছে।
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন বিক্ষিপ্ত কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। পূর্বাভাস ছিল আরও বৃষ্টিপাত হওয়ার। কিন্তু বুধবার হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, ওড়িশার উত্তর উপকূলে রয়েছে নিম্নচাপের অবস্থান। ফলে ভারী বৃষ্টি পাবে পড়শি রাজ্য ওড়িশা। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। যদিও দুই মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়ায় কয়েক পশলা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। নিম্নচাপের জেরে সমুদ্র উত্তাল থাকায় ৮ আগস্ট পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে শহর ও শহরতলির আকাশ মেঘলা। রাত পর্যন্ত উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত শহর কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে ৩১.৬ মিলিমিটার। বৃষ্টির ফলে কমেছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও। এদিন শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম।
“সমুদ্রে শক্তি বাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা ও ওড়িশার বালেশ্বরের মধ্য দিয়ে এই নিম্নচাপ স্থলভাগে প্রবেশ করে। যার প্রভাবে এদিন ওড়িশা উপকূলে, গাঙ্গেয় বাংলার উপকূলেও বৃষ্টি হয়েছে।”জানিয়েছেন হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস। তাঁর কথায়, অতি ভারী না হলেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। বস্তুত, শ্রাবণের মাঝামাঝি হয়ে গেলেও এখনও তেমনভাবে বৃষ্টি নামেনি দক্ষিণবঙ্গে। কিছুদিন আগে ঘূর্ণাবর্তের জেরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি।
হাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে উত্তরের আলিপুরদুয়ারে যেখানে বৃষ্টির পরিমাণ ১,৫২৯.৮ মিমি, সেখানে দক্ষিণবঙ্গ পেয়েছে মাত্র ১৭৪.৯ মিমি। কলকাতার হাল আরও করুণ। জুলাইয়ে শহরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫৯.৯ মিমি। এ বছর দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার কৃপণতা ভাবাচ্ছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের। দিল্লির মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, বর্ষণের ঘাটতিতে গাঙ্গেয় বঙ্গ এখন সারা দেশের মধ্যে এক নম্বরে! মরু এলাকা পশ্চিম রাজস্থান বা কচ্ছকেও ঢের পিছনে ফেলে দিয়েছে সে। মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান বলছে, ১ জুন থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার ঘাটতি ৪৬ শতাংশ। অথচ কচ্ছে ঘাটতি ২৬ শতাংশ। আর মরু এলাকা পশ্চিম রাজস্থানে বর্ষার ঘাটতি মাত্র তিন শতাংশ। শুষ্ক এলাকা বলে চিহ্নিত মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে বর্ষা স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া নিম্নচাপও শেষমেশ পথ বদলে ওড়িশামুখী হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.