সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ভয়ংকর দুর্ঘটনায় হারিয়েছিল পরিবার। এরপর আজ এখানে তো কাল অন্য কোথাও রাত কেটেছে। কেউ খেতে দিলে পেট ভরেছে নাহলে খালি পেটেই ঘুমিয়ে পড়তে হয়েছে জাইগুন বিবিকে। তিরিশ বছর পর অবশেষে স্বস্তি। রেডিও ক্লাবের সহযোগিতায় পরিজনদের ফিরে পেলেন বৃদ্ধা।
তিরিশ বছর আগে আগে স্বামী শেখ গোলাম নবির সঙ্গে ট্রলারে বিয়েবাড়ি যাচ্ছিলেন জাইগুন বিবি। সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের কাছে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ হন তাঁর স্বামী। কোনওরকমে সাঁতরে পাড়ে ওঠেন মহিলা। কিন্তু ওই ঘটনার জেরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ পাননি পরিবারের লোকজন। কয়েক বছর আগে মেদিনীপুরের শোনপুরের একটি বাড়ি থেকে ওই মহিলার ভাই তাঁকে খুঁজে বের করেন। কিন্তু ভাইয়ের মৃত্যুর পর ফের বেপাত্তা হন ওই মহিলা। এরপর বহু খোঁজাখুঁজি করেও খোঁজ না মেলায় আত্মীয়স্বজন তাঁকে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন।
কিছুদিন আগে সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাটে এক মহিলাকে উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখে স্থানীয় এক টোটোচালক হ্যাম রেডিও ক্লাবের সদস্য দিবস মণ্ডলকে বিষয়টি জানান। তাঁরা ওই মহিলাকে স্থানীয় একটি স্কুলে রাখেন। আইসিডিএস-এর কর্মীরা নিয়মিত খাবার দেন তাঁকে। এরপরই হ্যাম রেডিও ক্লাবের সদস্যরা মহিলাকে ঘরে ফেরাতে উদ্যোগী হন। কিন্তু ওই মহিলা তাঁর কোনও ঠিকানাই বলতে পারেননি। তবে অসংলগ্নভাবে কয়েকটি নাম বলতেন তিনি। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বহু চেষ্টার পর হাওড়ার জগাছার একটি ঠিকানা পান ক্লাবের সদস্যরা। ওই ঠিকানায় খোঁজখবর করে জানতে পারেন, যাঁদের কথা মহিলা বলছেন, তাঁদের কেউ বেঁচে নেই। এরপর ওই এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধার হওয়া মহিলার ছবি দেখাতে জানা যায় তাঁর নাম।
এলাকাবাসীরা জানান, ওই মহিলার নাম জাইগুন বিবি। প্রায় তিরিশ বছর আগে জগাছার দাস পরিবারে পরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। ওই পরিবারই তাঁকে সুনীতা নাম দেন। সেখান থেকে রেডিও ক্লাবের সদস্যরা জানতে পারেন মহিলার বাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগরদ্বীপের কৃষ্ণনগরে। রেডিও ক্লাবের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, এরপরই ওই মহিলার ছবি দেখিয়ে সাগরের কৃষ্ণনগরে শুরু হয় খোঁজখবর। তখনই খোঁজ মেলে মহিলার শ্বশুরবাড়ি ও বাপেরবাড়ির। সেখান থেকেই হদিশ মেলে জাইগুন বিবির ভাই সেরাউদ্দিন খাঁর ছেলে মুকলেসুর রহমান খাঁর। এরপর সোমবার স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য দেবব্রত দাসের উপস্থিতিতে হারিয়ে যাওয়া ওই মহিলাকে পরিজনদের হাতে তুলে দেয় রেডিও ক্লাবের সদস্যরা।। বহুবছর আগে হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়াকে কাছে পেয়ে খুশির বন্যায় ভাসে খাঁ পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.