শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: ফের মানবিকতার নজির স্থাপন করল সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এবার চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে ফিরে পেলেন পুরুলিয়ার এক বৃদ্ধ দম্পতি। রবিবার চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে এসে নিজেদের একমাত্র ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন ওই দম্পতি। কয়েকদিন আগে ওড়িশার মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধ দীর্ঘ ৩০ বছর পর ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।
পুরুলিয়া জেলার কোটশিলা থানার মাতকায়া গ্রামের বাসিন্দা ভবতারণ কুমার ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী কুমার। ওই দম্পতির একমাত্র সন্তান উত্তম কুমার। গরিব ভবতারণ কুমার ভিক্ষে করেই সংসার নির্বাহ করেন। মাস দশেক আগে কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয় উত্তম। ছেলের চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য ছিল না নেই ভবতারণবাবুর। একসময় তীব্র মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল উত্তম। এক রাতে নিঁখোজ হয়ে যান তিনি। বিস্তর খোঁজাখুজি করে ছেলের আর সন্ধান পাননি. হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। এদিকে ঘুরতে ঘুরতে উত্তম এসে পড়ে চন্দ্রকোনায়। স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে ফেলে এক সময়। দিন দশেক আগে উত্তম এসে পড়ে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের দোরগড়ায়। ততদিনে সারা শরীরে পচন ধরেছে, হাত পায়ের গভীর ক্ষত থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে।
নাম ঠিকানাহীন ওই যুবককে হাসপাতালে জায়গা দিয়েছিলেন চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিএমওএইচ গোপাল দে। তাঁর অন্যান্য সহকর্মীদের নিয়ে উত্তমের চিকিৎসা শুরু করেন গোপালবাবু। ধীরে ধীরে উত্তম সুস্থ হয়ে উঠে। সেরে যায় ক্ষত। স্মৃতিশক্তিও ফিরে পেতে শুরু করে উত্তম। শনিবার সে নিজের নাম ঠিকানা বলে দেয় ডাক্তারবাবুকে। সঙ্গে সঙ্গে গোপালবাবু যোগাযোগ করেন চন্দ্রকোনা থানায়। থানার ওসি প্রশান্ত পাঠক দ্রুত কোটশিলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তমের বিষয়টি জানিয়ে দেন। খবর পেয়ে রবিবার ভোর সকালে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে হাজির হয়ে যান ভবতারণবাবু ও তাঁর স্ত্রী । ফিরে পান নিজের ছেলেকে। শীণর্কায় পাতলা চেহারার উত্তমের মাথার চুলে পাক ধরেছে। তিনি বাবা-মাকে চিনতে পারেন। তিনজনেই কেঁদে ফেলেন হাসপাতাল চত্বরে। একমাত্র সন্তানকে ফিরে পেয়ে যারপর নাই খুশি ভবতারণবাবু। তিনি বললেন, “ আমরা খুবই গরিব মানুষ। উত্তমই আমাদের একমাত্র সন্তান। মাস দশেক আগে নিঁখোজ হয়ে যায়। কত খুঁজেছি, পাইনি। চন্দ্রকোনা হাসপাতালের ডাক্তারবাবু ও পুলিশের বড়বাবুকে অনেক ধন্যবাদ। আমার হারানো মাণিককে তাঁরা ফিরিয়ে দিয়েছেন। ” ফিরে যাওয়ার সময় ওসি প্রশান্ত পাঠক উত্তমের হাতে কিছু টাকাও দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য।
ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.