নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: মন্দিরের ভিতরে পুজোয় ব্যাস্ত ঠাকুর মশাই।মন্দিরের সামনে বসে রয়েছেন শতাধিক ভক্ত। লাল পেড়ে শাড়ি পরা তিন মহিলা মাথা ঘুরিয়ে মন্দিরের সামনে লাট খেয়ে পড়ছেন বারবার। উলু আর শঙ্খধ্বনির শব্দে এলাকা গমগম করছে৷ সামনে বসে থাকা ভক্তদের দিকে কড়া নজর রেখে চলেছে দুই যুবক ও এক মহিলা। জানা গেল, প্রথমে ভর হবে তিন মহিলার। তারপর রবিন ঠাকুরের শরীরে প্রবেশ করবে ঠাকুর। এরপর “মা” রবিনের মুখ থেকে ভক্তদের কথা বলবেন, রোগ শুনে ওষুধ দেবেন তাদের। সন্তান, সাংসারিক সমস্যা, ক্যান্সার-সহ পৃথিবীর যে কোনও রোগের ওষুধ মিলবে৷ আর প্রতিবেশী দুই যুবক সেই ভক্তদের কাছ থেকে সুযোগে হাতিয়ে নেয় মোটা টাকা। এভাবেই বছর তিনেক ধরে বনগাঁ থানার চাঁদা পাঁচমাইল উত্তরপাড়া বিনয় কলোনির রবীন দাস তার বাড়িতে কালী মন্দির বানিয়ে প্রতারণার ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন। সঙ্গে তাঁর দুই সহযোগী চাঁদা এলাকার শঙ্কর সূত্রধর ও গোবরা পুরের অনিল দাস নামে দুই যুবক।
বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে প্রতারণার অভিযোগ শুনে মঙ্গলবার ওই বাড়িতে হাজির হয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যরা। বুজরুকির পর্দা ফাঁস হতেই ঘরের দরজায় দেন রবিন দাস। পালিয়ে যায় অন্য সহযোগীরা। জানা গিয়েছে, সোম, মঙ্গল ও শনি বার ভক্তদের সঙ্গে কথা বলেন ঠাকুর। ফুল-বেলপাতা মাটি শিকড়ের ওষুধ দেন তিনি।ওষুধ খেয়ে বহু মানুষ সুস্থ হয়- এমনই দাবি তাঁদের। তাই দূর দূরান্ত থেকে তিন দিন ভিড় জমায় বহু ভক্ত।
স্থানীয় অয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন “দীর্ঘদিন ধরে ধর্মপ্রাণ ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষদের সুকৌশলে বোকা বানিয়ে প্রতারণা করে চলেছে রবিন দাস ও তাঁর সহযোগীরা।” খবর পেয়ে দিন কয়েক আগে ভক্ত সেজে ওই বাড়িতে হাজির হন বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের প্রদীপ সরকার, সজল ভদ্ররা। সেদিন ঠাকুরের নিধান নিয়ে ফের মঙ্গলবার প্রশাসনকে জানিয়ে ওই বাড়িতে ভক্ত সেজে হাজির হন তাঁরা৷ রোগী সেজে সঙ্গে থেকেন সাংবাদিকরা। রবিন ঠাকুরের মধ্যে আজ ঠাকুর এসেই পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে ঠাকুর চলে যান। তার সাগরেদরা জানান মাছ মাংস খেয়ে কেউ এসেছে, মোবাইলে ছবি তোলা হয়েছে ,তাই ঠাকুর এসেও রুষ্ট হয়ে চলে গিয়েছেন।”
এর পরেই বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের সম্পাদক প্রদীপ বাবু ও সজল ঘটনা চেপে ধরেন তাঁদের। প্রশ্ন করেন, “আগের দিন দিন মাছ মাংস খেয়ে এসেছিলাম তখন ভরে হল কী করে?” আগে আসার প্রমাণ দেখান প্রদীপ বাবু। বিপদ বুঝে পালিয়ে যান ভর হওয়া তিন মহিলা। রবিন ঠাকুর দরজা বন্ধ করে দেন। ভক্তদের মধ্যে শোরগোল তৈরি হয়। হুমকি আসতে থাকে সাংবাদিকদের। বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা ওই বাড়িতে আসা ভক্তদের বুঝিয়ে বলেন ভণ্ডামীর বিষয়। প্রদীপ সরকার বলেন, “রবিন ঠাকুরের বুজরুকির বিষয়ে বহু মানুষ আমাদের জানিয়েছিল৷ আগে আমরা নিজেরাই ভক্ত সেজে ওই বাড়িতে এসেছিলাম। মহকুমা শাসককে জানিয়ে আজ ফের বাড়িতে এসে ভক্তদের সামনে সত্য উদঘাটন করলাম। এই এলাকায় পরবর্তীতে কুসংস্কার বিরোধী সভা করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.