নন্দন দত্ত, সিউড়ি: লড়াই। গৌরী হাজরার জীবনে এটাই মন্ত্র। হার না মানার শপথ নিয়ে সদরের সিউড়ির বুকে প্রথম মহিলা টোটো চালক। টোটো চালিয়ে সংসার চালানোকেই পেশা করেছে অষ্টম শ্রেণি পাশ করা যুবতীটি।
সিউড়ি বিদ্যাসগর কলেজের পিছনের আস্তানার কাছে বছর সাতাশের গৌরীর ঠিকানা। বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয়েছিল শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে। তারপরে এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৌরীর স্থায়ী ঠিকানা বাবার বাড়ি কলেজ পাড়ায়। তাঁর এখন চার বছরের মেয়ে। সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা। আর সবে দুর্ঘটনার কবলে পড়া ভাই। টোটোর হ্যান্ডেলেই তার সংসারের স্টিয়ারিং বাঁধা। টোটোর চাকাতেই তাঁর সংসারের চাকা ঘুরছে। সিউড়ির বানীমন্দির স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়েছিল। তারপরেই লড়াইয়ের ময়দানের নেমে পড়া। নিজেকে নিজেই বিচ্ছিন্ন করা গৌরী প্রথমে সাইকেলে চেপে শহরের চারিদিকে পড়ে থাকা কাগজের কার্টন, প্লাস্টিক কুড়িয়ে সংসারের হাল ধরেছেন। পরে জুটেছে একটা প্যাডেল করা ট্রলি। সদরের মানুষ দেখেছে ছিপছিপে চুড়িদার পড়া একটি মেয়ে কোমরে ওড়না জড়িয়ে ট্রলি ভরতি কাগজ কুড়িয়ে বাড়ি ফিরছে। দু’মাস আগে জুটেছে ঋণের টোটো।
[অবাক কাণ্ড! ৩০ বছর শুধু চা খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন এই মহিলা]
গৌরীর কথায়, ‘এতে আমার শারীরিক পরিশ্রম কম হচ্ছে আবার অনেক বেশি কাগজ জোগাড় করতে পারছি।’ কিন্তু পথে যেতে আসতে যাত্রী ভাড়াও মিলছে। কিন্তু তাঁর টোটো গোলাপি নয়। যেমন অন্যান্য শহরের মেয়েরা গোলাপি ক্যাব চালায়। সংসারের মতোই ম্যাড়ম্যাড়ে সাদা রংয়ের।নারীশক্তির লড়াই বলে তাঁর পাশে দাঁড়ায় না কোনও সংগঠন। তবে প্রশ্ন করে। মফঃস্বল শহরে একটি মেয়েকে টোটোর কেবিনে দেখে নানা প্রশ্ন। গৌরী বললেন, ‘লোকে নানা কথা বলে। কিন্তু তাঁরা তো ভাতের জোগান দেয় না। আমি তাই তাঁদের কথা শুনেও বুঝতে পারি না।’ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টোটো কিনেছে। সকালে দুধের শিশুকে অ আ অক্ষর চিনিয়ে তারপরে কোমরে ওড়না বেঁধে বেড়িয়ে পড়েন গৌরী। সামাজিক অক্ষর পাঠ নিয়ে বাড়ি ঢুকতে সন্ধে সাড়ে সাতটা। গৌরীর কথায়, ‘আমি এভাবেই আমার মেয়ের জীবনকে সুস্থ সুন্দর করে তুলতে চাই।’
অকাল গৌরী নৌকায় এসে গজে গমন করে কিনা সে নিয়ে জ্যোতিষচর্চা চলে। তাঁর আগমন, গমনে শুভাশুভ লাভ দেখে বিশ্বাসীরা। কিন্তু এ গৌরী সকাল হলেই টোটো হাতে বেরিয়ে পড়েন। বাজার ভাল থাকলে বাড়ি ফিরে দুটো গরম ভাতেই তাঁদের জীবন চলে।
ছবি: বাসুদেব ঘোষ
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.