সৌরভ মাজি, বর্ধমান: আজব নেশা। মদে আর পোষাচ্ছিল না। চড়া ডোজ চাই। ‘হোমিওপ্যাথী ওষুধ’ কিনে নেশা শুরু করেছিলেন।প্রথমবার নেশাও হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু দ্বিতীয়বার সেই নেশা করতে গিয়ে মারা গেলেন দু’জন। হাসপাতালে ভরতি আরও একজন।চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের সাহাপুর গ্রামে। তদন্তে নেমে এক হাতুড়ে চিকিৎসক-সহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে হোমিওপ্যাথি ওষুধের কয়েকটি বোতলও। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
মৃতেরা হলেন অরুণ রুইদাস ও এমদাদুল শেখ। অরুণের বাড়ি জামালপুরের সাহাপুর গ্রামেই। আর বীরভূমের জ্যেষ্ঠ ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা এমদাদুল। ওই গ্রামেরই শেখ মনিরুল হক ভরতি জামালপুর ব্লক হাসপাতালে৷ মৃত ও অসুস্থরা সকলেই পেশায় রাজমিস্ত্রী। সাহাপুর গ্রামেই একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ করেন তাঁরা। মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় অরুণের। আর বুধবার জামালপুর ব্লক হাসপাতালে মৃত্যু হয় ইমদাদুলের। মনিরুল জানিয়েছেন, সোমবার রাতে নেশার জন্য বংশী পণ্ডিত নামে তাঁদেরই এক সহকর্মী একটি বোতল কিনে এনেছিলেন। মদ ভেবেই তাঁরা তা খেয়েছিলেন। ভাল নেশাও হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে বুকে, পেটে প্রচণ্ড জ্বালা শুরু হয়। মাথা যন্ত্রণা ও বমি শুরু হয়। এদিকে মৃত অরুণ রুইদাসের পরিবারের দাবি, সোমবার একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে বসে মদই খেয়েছিলেন ওই তিনজন। মদ্যপানের জেরে মৃত্যু বলেও দাবি তাঁর৷ এই ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ ও আবগারি দপ্তর।
তদন্তে জানা যায়, মদ নয়৷ একটি বিশেষ ধরণের তরল খেয়ে নেশা করেছিলেন অরুণ, এমদাদুল, মণিরুল ও বংশী। ওই তরলটি বোতলে করে নিয়ে এসেছিল বংশী পণ্ডিত নামে এক যুবক৷ তাকে জেরা করছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জেরায় বংশী বলেছে, হুগলির হরিপালের এক হাতুড়ে চিকিৎসক জামালপুরে বেত্রাগড়ে নিয়মিত আসেন। বংশীই এলাকার একটি হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকান থেকে ওই তরল ওষুধ বোতলে করে নিয়ে এসে হাতুড়ে চিকিৎসককে দিয়েছিলেন। সেই চিকিৎসকই তা ওই চারজনকে বিক্রি করেছিল। ওই ওষুধের বেশ কয়েকটি বোতল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে বলে জানা গিয়েছে।পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক অঞ্জন হালদার জানিয়েছেন, থুজা অক্সি ২০০ নামের ওই ওষুধে ৯১ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে। সাধারণত তা আঁচিল নিরাময়ে রোগী ২-১ ফোঁটা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই ওষুধের অ্যালকোহলের মাত্রা অত্যন্ত বেশি, তাই মারা গিয়েছেন ওই দু’জন।
ছবি: মুকুলেশুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.