রাজা দাস, বালুরঘাট: গাফিলতির জেরে বালুরঘাটের এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত কলকাতার মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল৷ ভুল চিকিৎসার মাশুল হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওয়েস্টবেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন সব কিছু খতিয়ে দেখে শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের চকভবানীর বাসিন্দা বছর একান্নর শুক্লা পাল৷ কিডনি সংক্রান্ত অসুস্থতায় তাঁকে গত বছরের ১৩ জুলাই কলকাতার মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। চিকিৎসা চলাকালীন ২৯ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়৷ পরিবারের অভিযোগ ছিল, ডায়ালিসিসের চ্যানেল করতে গিয়ে শুক্লাদেবীর শিরা কেটে ফেলেছিলেন হাসপাতালের নার্সরা। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়৷ শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হতে থাকে তাঁর। রোগীর অবনতি দেখে চিকিৎসার গাফিলতি তোলে পরিবার। চিকিৎসা চলাকালীনই গত ২৪ জুলাই ২০১৮ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে রোগীর পরিবার লিখিত অভিযোগ করে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনে।
এদিকে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা হাজার চেষ্টা করেও শেষরক্ষা করতে পারেননি। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়। অভিযোগের যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখে শুনানির পর জরিমানার নির্দেশ দিল চার সদস্যের কমিটি৷ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ভুল চিকিৎসার মাশুল হিসেবে মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন ওয়েস্টবেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন। বিচারকদের চার সদস্যের কমিটি মৃতার ছেলে শুভ্রজিৎ পালের নামে বালুরঘাটের কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে দু’লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই কাজ শেষ করে তা কমিশনের কাছে জানাতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে৷
পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক মৃতার স্বামী প্রদীপ পাল বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়ালিসিসের চ্যানেল করতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর গলার শিরা কেটে ফেলেছিল। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে তা জমে যায়। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে কর্তৃপক্ষ সিসিইউ ইউনিটে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় রোগীকে। উলটোদিকে চ্যানেল করে চিকিৎসা শুরু করে। স্ত্রী’র অবস্থার অবনতি দেখে তিনি কমিশনে নালিশ জানান। পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী মারা যায়। এদিকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা বাবদ আনুসাঙ্গিক ১১ লক্ষ ৬৩ হাজারেরও বেশি টাকা বিল হয় হাসপাতালে। অথচ কর্তৃপক্ষের ভুলেই ভেন্টিলেশানে রেখে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ভুলেই শুক্লা দেবীর মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে তোলেন তাঁর স্বামী৷ সেসময় অবশ্য অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়ান৷ তাই স্ত্রী’কে ভরতির সময় জমা করা চল্লিশ হাজার টাকা ছাড়া পরবর্তীতে আর টাকা দিতে হয়নি প্রদীপবাবুকে। সমস্ত অভিযোগ, মেডিক্যাল রিপোর্ট খতিয়ে দেখে কমিশনের তদন্তকারীরা জানান, আর্টারির মতো জায়গায় ১০ মিনিট চেপে ধরেও রক্ত বন্ধ করা যায়না। ওখানে ভাসকুলার সার্জারি করতে হত। তাই ১৯৩ মিনিট রক্ত দিয়েও রোগীকে বাঁচানো যায়নি। প্রদীপ বাবু জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পর তাঁরা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আলাদা করে মামলা দায়ের করবেন কি না, তা আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.