জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সভা, সমিতি ও মেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর ফলে এবার দেশের অন্যতম বড় মেলা মতুয়া ধর্ম মহামেলা করা হবে না বলে ঘোষণা করা হল। সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘ (All India Matua Mahasangha)-র পক্ষ থেকে প্রতিবছর মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে গাইঘাটা ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে ওই ধর্ম মহামেলার আসর বসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকেও মতুয়া ভক্তরা মেলায় আসেন পুণ্য স্নান করতে। লক্ষ লক্ষ মতুয়া ভক্তের সমাগমে মেলা জমজমাট হয়ে ওঠে৷
আর তাই আশঙ্কাটা তৈরি হয়েছিল। কারণ, করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বড় জমায়েত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ স্বাভাবিকভাবেই ঠাকুরনগরের সচেতন মানুষরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, মেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন। ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও তাঁরা এবিষয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের কাছে।
মতুয়া ধর্ম মেলার আয়োজন করা হবে কী হবে না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার ঠাকুরবাড়িতে বৈঠক করেন মমতা ঠাকুর। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনা ভাইরাস ঠেকাতে এবার আমরা মেলার আয়োজন বন্ধ রাখছি৷ ঠাকুরের পুজোটাই শুধু হবে। মানুষের জীবন বাঁচানোটাই আমাদের কাছে বড় ধর্ম। লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমাগম যাতে না হয় সেজন্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফোনের মাধ্যমে ভক্তদের কাছে এবার মেলায় না আসার আবেদন জানানো হচ্ছে। ভক্তদের বলা হচ্ছে ঠাকুরের জন্মতিথিতে নিজেদের এলাকায় আপনারা পুণ্যস্নান করুন। ঠাকুরের পুজো করুন৷’
যদিও মমতা ঠাকুরের ঘোষণার পরেও মেলা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা নাও ঘটতে পারে। কারণ অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘মতুয়া ধর্মগুরু হিসেবে আমি ভক্তদের বলতে পারি না আপনারা মেলায় আসবেন না৷ আপনারা আসুন সেটাও আমি বলছি না৷ মতুয়া ভক্তরা মেলায় আসেন রোগমুক্তির জন্য। কামনা সাগরে স্নান করলে তাঁদের রোগমুক্তি হয়। এটাই তাঁদের বিশ্বাস। ফলে মেলা বন্ধ করে দিতে পারি না।’
সম্প্রতি মেলা হবে কি হবে না এই নিয়ে টানাপোড়েন এবং মেলা আয়োজনের দায়িত্ব কারা পাবে তা নিয়ে এই বিবাদ গড়িয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। তার মাঝেই মঙ্গলবার ঠাকুরনগরে গিয়ে দেখা গেল একপক্ষ মেলার আয়োজন নিয়ে চুপচাপ থাকলেও অন্যপক্ষ মেলা আয়োজনের তোড়জোড় করছে৷ আগামী ২২ মার্চ মেলা শুরু হওয়ার কথা। তার আগে ঠাকুরবাড়ির পরিকাঠামো নতুন করে সাজানো হচ্ছে। অস্থায়ী দোকানপাট তৈরির কাঠামো শুরু হয়েছে। যদিও সবকিছুই নির্ভর করছে আদালতের রায়ের উপরে। সেদিকেই তাকিয়ে ঠাকুরনগরের সচেতন বাসিন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.