নন্দন দত্ত, সিউড়ি: দীর্ঘ অপেক্ষার পর ছেলে ঘরে ফিরল, কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে। বৃহস্পতিবার গোটা দিনের অপেক্ষা বিফলে গিয়েছে। ভারত-চিন লড়াইয়ে শহিদ হওয়া ছেলেটাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন বলে অপেক্ষায় ছিল বীরভূমের মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়া গ্রাম। দেহ ফেরেনি রাজেশ ওরাংয়ের। তবে শুক্রবার সকাল থেকে ফের শহিদকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত হয়েছেন এলাকাবাসী। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে রাজেশের কফিনবন্দি দেহ নিয়ে সেনা কনভয় পৌঁছে যায় বেলগড়িয়া গ্রামে। ফুল, মালা, গান স্যালুটে শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পর্বের পর বাড়ির পাশে সমাধিক্ষেত্রে চিরশয্যায় শায়িত হবেন শহিদ রাজেশ ওরাং।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ পানাগড়ের সেনাঘাঁটি থেকে শহিদ রাজেশ ওরাংয়ের দেহ নিয়ে বেরয় সেনা কনভয়। সেখান থেকে বীরভূমের মহম্মদবাজার পর্যন্ত গোটা রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করে বীরভূমে জেলা পুলিশ। জাতীয় সড়কে অন্য কোনও যান প্রায় ছিলই না। সিউড়ি হয়ে সেনা কনভয় যখন মহম্মদবাজারের দিকে এগোতে থাকে, তখনই কার্যত রাস্তায় জন অরণ্য। সকাল সকালই আশেপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ বৃহস্পতিবারের মতো প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন।
ঘড়িতে ঠিক ন’টা তিরিশ। জনতার ভিড়ের মাঝখান দিয়ে গ্রামে ঢুকলেন রাজেশ, বীরের মতোই। তফাৎ একটাই। আগে যতবার এসেছেন, নিজে হেঁটে এসেছেন। আর এবার এলেন সেনার শববাহী শকটে। শায়িত হয়ে, ফুল-মালায় সজ্জিত হয়ে। ফিরে এলেন একেবারেই, আর কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে যাবেন না। রাজেশ এখন ঘুমোবেন, ঘুমিয়েই থাকবেন। জাগবেন না।
ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন মা মমতা ওরাং। কার্যত কোনও কথাই বলতে পারছিলেন না। তাঁকে আগলে রাখতে হচ্ছিল। তবে শুক্রবার ছেলেকে এত সমারোহে ফিরতে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। সেই কান্না আর বাঁধ মানল না।
প্রতিবেশীদের চোখে কিন্তু কান্না নেই। তাঁরা ফুঁসছেন ক্ষোভে। চিন সেনার বিরুদ্ধে যত দ্রুত বদলা নেওয়া যায়, সেই অপেক্ষা করছেন তাঁরা। কেউ কেউ বলছেন, কষ্ট কেন হবে? রাজেশ দেশকে বাঁচাতে বিদেশি শত্রুর বর্বরতায় প্রাণ দিয়েছে। তার বদলা নিলেই একমাত্র স্বস্তি পাবেন দেশবাসী। কেউ বলছেন, রাজেশের স্মৃতি ধরে রাখতে গ্রামে একটা স্কুল তৈরি করা হোক অথবা একটা রাস্তার নাম হোক শহিদের নামে।
লাদাখ সীমান্তে শহিদ বাংলার দুই জওয়ান – রাজেশ ওরাং এবং বিপুল রায়ের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাতে রাজেশের বাড়ি গিয়ে পরিবারের হাতে চেক তুলে দিয়ে এসেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আশ্বাস দিয়েছেন, পরিবারের পাশে সবরকমভাবে থাকার। তবু ছেলেই যেখানে আর নেই, সেখানে এত কিছুর কী দরকার? মনে মনে হয়ত এমনই ভাবছেন মা, বাবা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.