পলাশ পাত্র, তেহট্ট: পুলওয়ামার বদলায় বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনা অভিযানের খবরে শোক কিছুটা প্রশমিত হয়েছিল। কিন্তু এবার তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করছে পুলওয়ামায় শহিদ হওয়া নদিয়ার জওয়ান সুদীপ বিশ্বাসের পরিবার। এয়ারস্ট্রাইকের পর নিহত জঙ্গির সংখ্যা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে যে ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ সুদীপের বোন ঝুম্পা। তাঁর দাবি,‘আমরা চাই যে জঙ্গিরা মারা গিয়েছে তাদের দেহ দেখানো হোক।’
১৮ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হামলায় শহিদ জওয়ানদের মধ্যে রয়েছেন বাংলার দুজন। নদিয়ার হাঁসপুকুরিয়ায় সুদীপ বিশ্বাস এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাবলু সাঁতরা। জইশের সেই হামলার কড়া জবাব দিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ুসেনা বাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে পাক ভূখণ্ডে বালাকোট-সহ তিনটি এলাকার জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আকাশপথে বোমা নিক্ষেপের জেরে নিহত হন বেশ কয়েকজন জঙ্গি। প্রাথমিকভাবে সেই সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৫০ বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সময় যত গড়িয়েছে, ততই তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এমনকী এয়ার ভাইস মার্শাল নিজেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছিলেন, বায়ুসেনা অভিযানে শুধুমাত্র লক্ষ্যভেদ করেছে, নিহতের সংখ্যা গোনেনি। সেটা তাদের কাজ নয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ুসেনার এমন সাফল্যের খবর শুনে শোক কিছুটা সামলে উঠেছিলেন শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের বোন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। বোন ঝুম্পা সেদিন দাবি তুলেছিলেন, শুধু ৩৫০ জঙ্গিকে নিহত করাই নয়, পাকিস্তানকেই মুছে দিতে হবে মানচিত্র থেকে।
[শিলিগুড়ির ইতিহাস বিজড়িত টাউন স্টেশন সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত হওয়ার অপেক্ষায়]
কিন্তু সম্প্রতি বালাকোটে নিহত জঙ্গির সংখ্যা নিয়ে হাজারও দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে নিজের ক্ষোভ চেপে রাখতে পারলেন না ঝুম্পা দেবী। এনিয়ে তিনি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বলা হচ্ছে আড়াইশো, তিনশো, সাড়ে তিনশো জঙ্গি নিকেশ হয়েছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জঙ্গিদের। কিন্তু আমরা কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কোন ছবিও না।’তিনি দাবি তোলেন, ‘পাকিস্তানে কী হচ্ছে, না হচ্ছে আমরা কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তাই সঠিক জানতেও পারছি না। মৃত জঙ্গিদের দেহ দেখানো হোক। অনেকেই বলছেন, কিছু হয়নি। কেউ বলছেন আড়াই, তিনশো, সাড়ে তিনশো জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। মৃত জঙ্গিদের দেহ দেখানো হলে সবই বোঝা যাবে। যারা আমার দাদাকে মেরেছে, তাদের মৃত্যু হলে ওর আত্মা শান্তি পাবে।’ ঝুম্পা দেবীর কথায়, ‘তিনদিন আগে জওয়ানদের এক অনুষ্ঠানে আমাদের ডাকা হয়েছিল। সেখানেও আমি সঠিক তথ্য জানানোর কথা বলেছিলাম। কত সন্তানকে হারাতে হল। কত মায়ের কোল খালি হল।’এর আগেও ঝুম্পা দেবী সিআরপিএফ জওয়ানদের নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেছিলেন। বায়ুসেনার অভিযানের পর উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরীর বাসিন্দা শহিদ রাম ভাকিলের বোন এবং অপর শহিদ প্রদীপ কুমারের আশি বছরের মা, দু’জনই মৃত জঙ্গিদের দেহ দেখার দাবি তুলেছিলেন। এবং তারপর শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের পরিবারের একই বক্তব্য নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.