সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: ফের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাজ্য সড়কের উপর তাণ্ডব চালাল গজরাজ। বিশাল বপু হাতির শুঁড়ের ধাক্কায় গাড়ি উলটে যাওয়ার জোগাড়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম-লোধাশুলি যাওয়ার পথে এ হেন দৃশ্যে রীতিমত ভয়ে কাঁটা পথচারীরা। বেশ কিছুক্ষণ রাস্তার উপর হাতিটি তাণ্ডব চালানোর পর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় জঙ্গলের দিকে পাঠানো হয়।
ঝাড়গ্রাম থেকে লোধাশুলি যাওয়ার পথে রাজ্য সড়ক শালবনি এলাকাটি হাতিদের করিডর। এই রাস্তা দিয়েই পারাপার করে স্থানীয় হাতি এবং দলমা হাতির দল। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই করিডর দিয়েই রাজ্য সড়কে উঠে আসে একটি দাঁতাল। রাজ্য সড়কে উঠে গাড়ি উলটে রীতিমত গাড়িতে মাথা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি প্রায় উল্টে দেওয়ার উপক্রম করেছিল একটি লোনার হাতি।
একাকী হাতির এ হেন কান্ড কারখানাতে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুঁড়ের ধাক্কায় বড়সড় বিপদ ঘটতে পারত। আর তা বুঝেই ওই গাড়ি এবং পিকআপ ভ্যানের চালক কোনওক্রমে গাড়ি থেকে নেমে পালান। তখনও হাতিটি গাড়ি এবং পিকআপ ভ্যানের ভিতরে খাবারের সন্ধান করছিল। তার এই রূপ দেখে ভয়ে কাঁটা হয়ে পড়েন মানুষজন। রাজ্য সড়কের উপর থমকে যায় গাড়ি চলাচল।
শেষপর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় হাতিটিকে জঙ্গলের দিকে পাঠানো হয়েছে। বনদপ্তরের কর্মীদের পর্যবেক্ষণ, গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় হাতিদের একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে। রাজ্য সড়ক এবং জাতীয় সড়কে উঠে হাতির দল গাড়ি দাঁড় করিয়ে খাবার খোঁজে। এক্ষেত্রে হাতি মানুষের ক্ষতি না করে খবারের সন্ধান চালায়। তবে যেভাবে বৃহস্পতিবার একটি চারচাকা গাড়ি এবং পিকআপ ভ্যানকে মাথা দিয়ে ধাক্কা মারছিল, তাতে বিপদের আশঙ্কা ছিল ষোলো আনা।
স্থানীয় যুবক পরিমল মাহাতোর কথায়, “তখন বিকেল পাঁচটা হবে। হাতিটি রাস্তার উপর উঠে একটি চারচাকা এবং একটি পিকআপ ভ্যানকে রীতমত ধাক্কা মারছিল। খাবার খুঁজছিল। শুঁড় বুলিয়ে চলছিল। যে কোনও সময় গাড়ি উলটে যেতে পারত। এবার আমাদের এই সব এলাকায় তেমন আম,কাঁঠাল হয়নি। হাতিগুলি বরাবর বাগানের আম, কাঁঠাল খেত। এবার সেভাবে পায়নি।খাবারের খোঁজেই রাস্তায় উঠেছিল।”
এ নিয়ে ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবারাজ হোলেইচ্ছি বলেন “কারও কোনও ক্ষতি হয়নি। এই রুটটি হাতিদের করিডর। এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। হাতিটি লোনার। এর আগেও রাস্তায় উঠেছে অনেক বারই। ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। ” ঝাড়গ্রাম প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সহ অধিকর্তা চঞ্চল দত্তর কথায়, “অনেক দিন ধরে হাতিটি এখানে রয়েছে। ফলে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এরা এর জন্য সুস্বাদু, রসালো খাবার ভালবাসে এবং তা পাওয়ার চেষ্টা করে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের খাবারের খোঁজে এরা গাড়ি গুলির কাছে যায়। এরা তো দলমার নয়, স্থায়ী হাতি। তাই সুস্বাদু খাদ্যের খোঁজ করে। আর যদি এদের শরীরে কোনও আঘাত থাকে, তাহলে এরা মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.