সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাতের বেলায় রেশন পন্য নিয়ে যায় মাওবাদীরা। তাই গ্রাহকদেরকে পরিমাপ মত পন্য দেওয়া যায় না। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে শনিবার ঝালদা এক নম্বর ব্লকের মাঠারিখামার গ্রাম পঞ্চায়েতের অযোধ্যা পাহাড়তলির খামারে গিয়ে এমন কথাই শুনলেন জেলাশাসক। খামার গ্রামের রেশন ডিলার শক্তিপদ মণ্ডল এমন কথা বলায় রীতিমতো নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। হতবাক হয়ে যান প্রশাসনের কর্তারা। এই কথা শুনে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানতে চান তিনি এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন কিনা? তখন ওই রেশন ডিলার জানান, কোন অভিযোগ করা হয়নি। এরপরেই প্রশাসনের তরফে নানান খোঁজখবর শুরু হয়ে যায়।
সত্যিই কি রাতের অন্ধকারে মাওবাদীরা এই গ্রামে পা রেখে এই রেশন ডিলারের কাছ থেকে পন্য নিয়ে যায়? নাকি গণবন্টনে ওই ডিলার বেনিয়ম করে প্রশাসনের হাতে থেকে বাঁচার জন্য এই কথা বলছেন? ইতিমধ্যেই খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর ওই ডিলারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, এই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে নানান বেনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরই এদিন ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচীতে প্রশাসন তাঁর দোকানে হানা দেয়। ওই দোকানের মজুত পন্য-সহ নথিপত্র খতিয়ে দেখেন খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের পরিদর্শক।
এই বিষয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া জানান, ওই রেশন ডিলারকে তারা এই বিষয়ে জিঞ্জাসাবাদ করবেন। তবে ঝালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই ডিলার বেনিয়ম করে প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতেই এই গল্প বানিয়েছে। তবে অতীতে এই জেলায় মাওবাদী কার্যকলাপের সময় রেশন ডিলারদের কাছ থেকে মাওবাদীরা রেশন পন্য নিয়ে যেত বলে অভিযোগ। কিন্তু একদা মাও উপদ্রুত ঝালদা থানার এই খামারে আগের মতো পরিস্থিতি এখন আর নেই। তবে ঝালদা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে মাও কার্যকলাপ চলছেই। তাই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন, এই বিষয়টিকে একেবারেই হালকা ভাবে দেখছে না। এই জেলায় বেশ কিছুদিন ধরেই রেশন ডিলাররা গ্রাহকদের কাছ থেকে পন্য কেটে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তবে এই জেলায় গ্রাহক অনুযায়ী পন্য খানিকটা কম আসছিল।
কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। তারপরেও ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহক অনুযায়ী পুরুলিয়া এখন পন্য পাওয়ায় জেলা প্রশাসন বলেছিল, এরপর গণবন্টন নিয়ে কোন অভিযোগ মিললে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের পরিদর্শককে শোকজ করা হবে। এদিন প্রশাসনের এই আচমকা হানায় ওই এলাকার পরিদর্শক সুদীপ জানা বলেন, “ওই রেশন ডিলার এইরকমই কি একটি কথা বলেছে আমি ঠিক শুনিনি। সেইসময় আমি নথিপত্র দেখছিলাম। প্রশাসন এরপর যা নির্দেশ দেবেন আমি সেই মোতাবেক কাজ করব।” রেশনে এই বেনিয়ম রুখতে জেলার প্রত্যেকটি দোকানেই একজন গ্রাহকের জন্য কী কী বরাদ্দ তা ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে বলে জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.