সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পরিস্থিতি অনুকূল। তাই গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ সপ্তাহে বিপুল সংখ্যক যুবক, যুবতীকে নিয়োগ করে অতর্কিত হামলার হুমকি দিল মাওবাদীরা (Maoist)! সোমবার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ার (Purulia) বরাবাজার, বান্দোয়ান এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া সিপিআই (মাওবাদী)-র হিন্দি প্রচারপত্রের লেখা উদ্ধার করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল রাজ্য পুলিশ তথা কেন্দ্রীয় বাহিনী। মাওবাদীদের এমন বার্তায় কার্যত মাথায় হাত গোয়েন্দা-সহ জঙ্গলমহলে মোতায়েন যৌথ বাহিনীর।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রচারপত্রে লেখা রয়েছে, “শত্রুপক্ষকে বিস্মিত করে তাদের ‘সাপ্লাই লাইন’ নষ্ট করে লাগাতার ছোট, মাঝারি অপারেশনের পাশাপাশি চারদিক থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।” সেইসঙ্গে এও উল্লেখ রয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে তড়িৎগতিতে আচমকা হামলা করা। এছাড়া এই হামলার জন্য পরিস্থিতি যে অনুকূল, তাও ওই প্রচারপত্রে স্পষ্টভাবে লেখা। রাজ্যে পালাবদলের পর যৌথবাহিনীর গুলিতে মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষাণজি মৃত্যুর পর মাওবাদীদের প্রচারপত্রে এভাবে হামলার হুমকি প্রথম।
এদিকে, বুধবার থেকে সিপিআই(মাওবাদী)-র গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। তা ভালভাবে পালনের ডাক দিয়ে সোমবার তাদের পোস্টার, ব্যানার দেখা গিয়েছিল পুরুলিয়ার বরাবাজার, বান্দোয়ানের বাড়ির দেওয়ালে, দোকানের সামনে। সেই পোস্টার এবং প্রচারপত্রের বার্তা উদ্ধার করে এখন জঙ্গলমহলের চার জেলা পুরুলিয়া-সহ বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং বীরভূমে বেশ চাপে কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্য পুলিশ। তাই এই পাঁচ জেলার একদা মাওবাদী প্রভাবিত (এলডব্লিউই)সমস্ত থানা ও পুলিশ ক্যাম্পে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। এনিয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগণ বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। এরিয়া ডমিনেশন ও অপারেশন চলছে। “
সোমবার উদ্ধার হওয়া প্রচারপত্রে উল্লেখ রয়েছে, গ্রামে গ্রামে আত্মরক্ষা দল – ‘গণমিলিশিয়া’ গঠন করে বিশেষ নজর দিতে হবে। অর্থাৎ সেই অতীতের মতই গ্রামের মানুষকে একত্রিত করার বার্তা। তাহলে কি জঙ্গলমহলে নতুন করে জনভিত্তি তৈরি করে ফেলেছে মাওবাদীরা? এই প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলকে অশান্ত করতে হামলার হুমকি দেওয়া মাওবাদীদের স্রেফ কৌশল কিনা – ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নও। সোমবারের ঘটনার পর জঙ্গলমহলের জুড়ে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী। গোয়েন্দা সূত্রে, সিপিআই (মাওবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি সম্ভবত তারা ভেঙে দিয়ে বিস্তীর্ণ জঙ্গলমহল ও ঝাড়খণ্ডের চার জেলা পূর্ব সিংভূম, পশ্চিম সিংভূম, সরাইকেলা-খরসোঁওয়া ও খুঁটি জেলাকে নিয়ে এই কমিটি তৈরি করেছে, যার নেতা অনল ওরফে পতিরাম মাঝি।
গত বছর পুরুলিয়া লাগোয়া ঝাড়খন্ডের সরাইকেলা-খরসোঁওয়া জেলার ইচাগড়ের কুকরু হাটে বিকাল বেলায় যে পাঁচজন পুলিশকে ‘খুন’ করে মাওবাদীরা অস্ত্র লুঠ করেছিল, তার দায়ও তারা স্বীকার করেছে ওই প্রচারপত্রে। ২০ মে, ২০১৯ থেকে ২০ মে, ২০২০ অর্থাৎ এক বছরে দক্ষিণ জোনাল কমিটির আওতাভুক্ত ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীরা যে হামলা করেছে সেই খতিয়ানও তুলে ধরেছে তারা। প্রচারপত্রে তাদের আরও বার্তা – মাওবাদী দমনে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৮-২২ পর্যন্ত যে ‘মিশন সমাধান’ প্রকল্প নিয়েছে, তাকে পরাস্ত করা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.