Advertisement
Advertisement
Silda

‘বেয়নেট নয়, উন্নয়নই আনবে বিপ্লব’, বলছে শিলদায় নিহত মাওবাদীর পরিবার

তবু আক্ষেপ রয়েছে পরিবারের।

Maoist leader killed in Silda, family recalls those days | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:February 28, 2024 9:25 pm
  • Updated:February 28, 2024 9:41 pm  

সুনীপা চক্রবর্তী: সশস্ত্র বিপ্লব ছেড়ে, রক্তস্নাত পথ ছেড়ে সুন্দর জীবনে ফেরার পথ দেখাচ্ছে সুষেনের পরিবার! যার ভাই গুলি করে মানুষ মেরেছে, গুলিতে যার প্রাণ গিয়েছে সেই পরিবারই বলছে, “বেয়নেট হোক যত ধারালো, কাস্তেটা শান দিও বন্ধু”, কারণ কাস্তে ধরলে উন্নয়ন হবে। সোনার ফসল উঠবে ঘরে। তাই বেয়নেট নয়, উন্নয়ন চাই। যৌথবাহিনী আর হার্মাদের অত্যাচারে জীবন বাঁচাতে যে সদ্য তরুণ বছর কুড়ির ছেলেটি বন্দুক হাতে তুলে নিয়েছিল। সেই সুষেন কালক্রমে হয়ে উঠেছিল মাওবাদী স্কোয়াডের নেতা। যার নেতৃত্বেই দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া মাওবাদী হামলা সংগঠিত হয়েছিল বিনপুর থানার শিলদা ক্যাম্পে। প্রাণ গিয়েছিল ২৪ জন ইএফআর জওয়ানের। আর ওই শহিদ ইএফআরদের মরিয়া শেষ লড়াইয়ে প্রাণ গিয়েছিল লালগড় থানার বৈতা অঞ্চলের জিরাকুলি গ্রামের মাওবাদী নেতা সুষেন মাহাতোর।

ঘটনার ১৪ বছর কেটে গিয়েছে। দোষীদের সাজা ঘোষণা করেছে মেদিনীপুর আদালত। তবু সেই ১৪ বছর আগের সংসারের ছোট ছেলের মৃত্যুর খবর আজও টাটকা মা, দাদার কাছে। মা রবনী মাহাতোর বড় আদরের ছিল সুষেন। আজও ভাইয়ের কথা বললে দাদা ষষ্ঠীচরণ মাহাতোরচোখ ছলছল করে। হার্মাদের শত অত্যাচারের পরেও দাদা, মা তাঁকে নিষেধ করেছিল মাওবাদীদের দলে না যোগ দিতে। কিন্তু অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্কুলের গণ্ডি না পেরোনো বছর কুড়ির ছেলেটি হতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। শিলদা ক্যাম্প হামলার একদিন পর ছেলের মৃতদেহ গ্রামে এসেছিল এবং গোপনে সৎকার করা হয়েছিল। তবে কপালে গুলিবিদ্ধ ছেলের মুখ আজও টাটকা তাঁদের স্মৃতিতে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ২০১৪-র ভোটে তৃণমূলের অ্যাকাউন্টে ‘গরমিল’! অরূপ বিশ্বাসকে তলব ইডির]

সুষেনের বড় দাদা ষষ্ঠীচরণ নিজের বিঘা তিনেক জমিতে বর্ষায় ধান চাষ ও সারা বছর সবজি চাষ করে সংসার চালান। তিন মেয়ে এক ছেলে, দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সংসার ষষ্ঠীর। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজো মেয়ে আগামী বছর মাধ্যমিক দেব। অপরজন সপ্তম শ্রেনিতে পড়ে। বছর দশেকের ছেলে রয়েছে তাঁর। সরকারের দেওয়া রেশনের চাল, ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড রয়েছে। মেয়ে বিদ্যালয় থেকে সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়েছে। এই সব মিলে চলে যায় তাঁদের। তবে মেয়ে কন্যাশ্রী পায়নি বা সরকারি ঘর পায়নি বলে আক্ষেপ রয়েছে।

সালটা তখন ২০০৭ -২০০৮ হবে। সুষেনের দাদা ষষ্ঠী জানায়, সেই সময় ছিল হার্মাদ আর যৌথবাহিনীর অত্যাচার। সুষেন ঝাড়খন্ড পার্টির লোকজনেদের সাথে কিছুটা ওঠাবসা করত। আর তাতেই হার্মাদ বাহিনী নিত্যদিন তাঁকে হুমকি, এমনকী মারধরও করছে। বাড়িতে চড়াও হয়ে পরিবারের লোকেদের উপর হামলা চালিয়েছে তারা। রাতবিরেতে যৌথবাহিনী পৌছে যেত। এই পরিস্থিতিতে ঘর ছাড়তে হয়েছিল সবাইকে। বাড়িতে একাকি বৃদ্ধাকেও রেহাই দেয়নি হার্মাদরা। তখনই বদল আনতে ঘর ছাড়ে সুষেন। তার কয়েক বছর মাওবাদীরা ধরমপুর দখল করার পর দেখা মিলেছিল সুষেনের। ওই ছিল শেষ দেখা। তার পর কয়েক বছর পর ঘরের ছেলের গুলি বিদ্ধ লাশ দেখেছিল পরিবার।

[আরও পড়ুন: মাঝপথে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, দিল্লির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে এবার সন্দেশখালি যেতে অনুমতি হাই কোর্টের]

দাদা ষষ্ঠী চরণ মাহাতো বলেন, “হার্মাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পরে ভাই মাওবাদীদের সাথে গিয়েছিল। অনেক নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু শোনেনি। শুনলে কী আর ওর এই পরিণতি হতো! ভাইয়ের কথা আজও মনে পড়ে। তবে আজ অনেক শান্তিতে আছি আমরা। চাষবাস করে চলে সংসার। চাল পাই,জব কার্ড আছে। একটা চাকরি হলে ভালো হতো।”

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement