সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সংশোধনাগারে বন্দি হয়ে থেকেই স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট বা সেট পরীক্ষায় বসছেন ধৃত মাও নেতা বিক্রম। প্রেসিডেন্সিতে কারাবাস করা ধৃত মাও নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম রবিবার কলকাতায় ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন কলেজে এই পরীক্ষা দেবেন৷ সকাল সাড়ে ন’টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত তার এই পরীক্ষা রয়েছে। রাজ্য কারা দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সংশোধনাগারে থেকে রাজনৈতিক বন্দি হয়ে এই প্রথম কোন ধৃত মাও নেতা সেট পরীক্ষায় বসছেন।
রাজ্য সরকার চায়, ধৃত মাওবাদীরাও সংশোধনাগারে থেকে নিজেদেরকে সংশোধন করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসুক। তাই বিক্রমের মত ধৃত মাও নেতাকে প্রেসিডেন্সিতেই লেখাপড়া করার সুযোগ করে দেয় কারা দপ্তর। প্রাক্তন বিচারকের ছেলে এই ধৃত মাও নেতা বিক্রম ২০১২ সালের ১৬ জুলাই পুরুলিয়ার অয্যোধ্যা পাহাড়তলির বলরামপুরের বিরামডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একে ৪৭–র মতো অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। পুরুলিয়ার তৎকালীন ডিএসপি (আইনশৃঙ্খলা) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দক্ষতায় তিনি পুলিশের জালে ধরা পড়ে যান। ওই পুলিশ আধিকারিক এখন উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে রয়েছেন। কিন্তু এই বিষয়ে ধৃত মাও নেতাকে শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া আর কিছুই বলতে চাননি।
[প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আদিবাসী গৃহবধূকে ‘গণধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ৪]
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের সুভাষগ্রামের আরএন চক্রবর্তী রোডের বাসিন্দা বিক্রম৷ ১৯৯৮ সাল থেকে নকশাল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। মেধাবী এই ধৃত মাও নেতা বারাসত প্যারীচরণ সরকার রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর নরেন্দ্র রামকৃষ্ণ মিশনে উচ্চমাধ্যমিক। সেখান থেকে খড়গপুর আইআইটি। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অর্ণব হঠাৎ ১৯৯৮ সালে নিখোঁজ হয়ে যান আইআইটি ক্যাম্পাস থেকে। ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাস নাগাদ মাও নাশকতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে জামিনও পান তিনি। তারপর বাড়িতে দু’মাস থাকার পর আবার নিখোঁজ হয়ে যান। প্রাক্তন বিচারপতির ছেলে হয়ে যান মাও নেতা। সিপিআই(মাওবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য। বিহার-ঝাড়খন্ড-ওড়িশা সীমান্ত আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক। পুরুলিয়া-পূর্ব সিংভূম-সরাইকেলা খরসোঁওয়া সীমানা জোনাল কমিটি ও পুরুলিয়ার অয্যোধ্যা স্কোয়াডের দায়িত্ব নিয়ে মাও ভিতকে মজবুত করেন এই জঙ্গলমহলে। পাতলা, ছিপছিপে, রোগাটে গড়নের বছর ৪০-এর এই ধৃত মাও নেতাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি সিপিআইএমের (মাওবাদী) শীর্ষ নেতা ছিলেন। দলে তিনি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ হিসাবে পরিচিতি পান। আসলে ছেলেবেলা থেকেই নানা কমিউনিজমের বই পড়তেন তিনি।
[দীর্ঘদিন ডিউটিতে অনুপস্থিত, বিচারকের নির্দেশে শ্রীঘরে সিআরপিএফ জওয়ান]
পুরুলিয়ায় গ্রেপ্তারের পর সেখানকার সংশোধনাগার থেকে তাঁর ঠিকানা হয় প্রেসিডেন্সি। সেখানে থেকেই ইগুনুর মাধ্যমে ইতিহাসে অনার্স করে স্নাতকোত্তর হন। দু’টিতেই ফার্স্ট ক্লাস পান। এবার পিএইচডি করতে চান বলে সংশোধনাগারের মাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। একসময় পুলিশের ত্রাস, জঙ্গলের বন্দুকধারী এখন অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ৷ তাই সেট-এর পাশাপাশি আগামী ২৮ ডিসেম্বর তিনি নেট-এও বসছেন। তাঁর নামে এরাজ্যে ৩১টি মামলা ছিল। তাঁর মধ্যে তিরিশটি মামলায় তিনি মুক্ত হয়ে গিয়েছেন। শুধু ইউএপিএ ধারায় শিলদা মামলায় তাঁর বিচার চলছে। ওই মামলাতেও আগামী ১৫ ডিসেম্বর তাঁর জামিনের জন্য আবেদন করবেন বিচারক।
ছবি: অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.