সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ব্যুরো: বন্যায় বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড (Uttarakhand)। লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। নিখোঁজ বহু। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ। সেখানেই আটকে বাংলার বহু পর্যটক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হাওড়া ও হুগলির অনেকে। কীভাবে ঘরে ফিরবেন, আদৌ পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন কি না, সেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সকলে।
জানা গিয়েছে, চুঁচুড়ার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায়, স্ত্রী চুমকি ও মেয়ে অন্বেষা, চন্দননগরের সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ও অরিজিৎ শীল-মোট ৫ জন ১১ অক্টোবর হাওড়া থেকে রওনা দেন দিল্লির উদ্দেশে। ১২ অক্টোবর দিল্লি পৌঁছে সেখান থেকে সড়কপথে হরিদ্বার পৌঁছন। হরিদ্বার থেকে রুদ্রপ্রয়াগ, শোনপ্রয়াগ হয়ে ১৫ অক্টোবর গৌরীকুণ্ডে পৌঁছন তাঁরা। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে কেদারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১৬ অক্টোবর কেদার যাওয়ার পথে মাঝে রাত কাটান। ১৭ তারিখ বিশ্বজিৎবাবু তাঁর পরিবার নিয়ে পায়ে হেঁটে কেদার মন্দিরে পৌঁছে গেলেও অরিজিৎ ও সত্যব্রতবাবু কেদারে উঠতে না পেরে গৌরীকুণ্ডে নেমে যান। কিন্তু কেদার পৌঁছনোর পরই এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন বিশ্বজিৎবাবুরা।
বিশ্বজিৎবাবু জানান, রবিবার সকালে কেদারনাথ মন্দিরে পৌঁছনোর পর এগারোটা থেকে হঠাৎই আবহাওয়া খারাপ হতে থাকে। দুপুর দুটো থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। তখনও বোঝা যায়নি প্রকৃতি কতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। তিনি জানান, আমফানের যে তাণ্ডব দেখা গিয়েছিল তার থেকেও ভয়াবহ এই পাহাড়ি এলাকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নিমেষের মধ্যে আশেপাশের এলাকায় ধস নেমে নিচে নামার সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বজিৎবাবু কোনওরকমে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মন্দির থেকে ৫০০ মিটার দূরে হেলিপ্যাডের কাছে নেমে যান। যদি হেলিকপ্টারে করে ফিরে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে হেলিকপ্টারের জন্য অসংখ্য মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। দুই ট্রিপে হেলিকপ্টারে কিছু পর্যটক ফিরে যেতে পারলেও বাকিরা সকলেই আটকে পড়েছেন ওই দুর্গম এলাকায়। ওইদিন রাতে অনেক কষ্টে মাথা গোঁজার ঠাঁই পান। পরের দিন তারা জয়পুরের একটি পরিবারের সঙ্গে একটি ডরমেটরি ভাড়া করেন।
সেটির ভাড়া আকাশচুম্বী। কলের মাধ্যমে যে জল আসে, তাই এখন ভরসা। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে খাওয়ার আকাল দেখা দিয়েছে। পয়সা দিয়েও তাঁরা খাবার পাচ্ছেন না। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য ১ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাতা কিনতে বাধ্য হয়েছেন। পাশাপাশি গৌরীকুণ্ডে আটকে পড়া চন্দননগরের দুই বাঙালি পর্যটকরা জানিয়েছেন, তাঁরা মন্দাকিনীর জলে বেশকিছু ঘোড়া ভেসে যেতে দেখেছেন। প্রকৃতি যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তা দেখে আতঙ্কিত হুগলির এই পাঁচ পর্যটক। তবে পাশাপাশি তাঁরা এও জানিয়েছেন মঙ্গলবার বিকেলে রোদ দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। তবে যেহেতু ধসের কারণে নিচে নামার সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাই এখন একমাত্র ভরসা হেলিকপ্টার। সেই হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু না হলে কবে নিচে নামতে পারবেন, তা নিজেরা জানেন না। ইতিমধ্যে এই পর্যটকরা তাদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। তবে থাকা ও খাওয়ার ব্যাপারে কোনওরকম প্রশাসনিক সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.