ছবি: শুভাশিস রায়।
স্টাফ রিপোর্টার: ব্রিগেডের সভা থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ সিপিএম নেতৃত্বকে দুরমুশ করতে গিয়ে ডাক দিয়েছিলেন, সভায় সিপিএমের কেউ থাকলে তাঁরাও আমার কথা শুনুন। এসইউসিআইয়ের ৪৮ ঘণ্টা পরের রিপোর্ট বলছে, সেদিন সিপিএম আর এসএফআইয়ের বহু কর্মী-সমর্থক ব্রিগেডে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, পরে তাঁরা যোগাযোগ করে এসইউসিআইয়ের আদর্শে কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সিপিএম কর্মীরা কারণ হিসাবে যা যা জানিয়েছেন, তার অন্যতম হল, সিপিএম মার্কসবাদের আদর্শ থেকে সরে গিয়েছে। নেতৃত্বে দ্বিচারিতা প্রবল। অশ্লীল কথার বেসাতি বেড়েছে। সেখানে এসইউসিআই স্রেফ মার্কসবাদের আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে এত বড় ব্রিগেড করে দিল। সূত্রের খবর, আলিমুদ্দিনেও সেই রিপোর্ট গিয়েছে।
এসইউসিআই তাদের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি দলের কথা প্রচার করতে যেতে বলেছে। এর মধ্যেই ব্রিগেডের সমীক্ষা রিপোর্টে তারা বিস্মিত এবং উৎসাহিত। সোমবার যার আলোচনাও হয়েছে দলে।
সেই রিপোর্ট ধরে কর্মীদের নির্দেশ, সিপিএম আর এসএফআইয়ের যে সব কর্মী এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে তো বটেই, যোগাযোগ বাড়াতে হবে সেই সব বাম কর্মী-সমর্থকের পাড়াতেও। তাঁদের দলে যুক্ত করে নিতে হবে। দরকার মতো লোকাল কমিটির শিক্ষা সেল পুনর্গঠন করে তাদেরও নামানো হবে এই কাজে। এসইউসিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিবদাস ঘোষের বই, ভাষণ সামনে রেখে প্রচার বাড়াতে হবে। দলের পলিট ব্যুরো সদস্য অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “সিপিএম নেতা-কর্মীরা আমাদের ব্রিগেডের কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে যে অশালীন কথা বলা শুরু করলেন, তাতে তাঁদের কর্মীরা বীতশ্রদ্ধ।
সিপিএম ভাবছিল যে, এসইউসিআইয়ের রাজনীতি তাঁদের কর্মীদের প্রভাবিত করে যেন টানতে না পারে। তাতে তাদের দেউলিয়া রাজনীতিই উন্মোচিত হয়ে যাবে। সেটাই হয়েছে।’’ পার্টি অফিসে বার্তা পাঠিয়ে ব্যক্তিগত মতামত জানান একাধিক বাম নেতা। শীর্ষ এক নেতার কথায়, “একজন নকশাল নেতা দিন কয়েক আগে কলকাতায় এসেছিলেন। তিনি জানান, কলকাতায় আসা ইস্তক শুধু এসইউসিআইয়ের ব্রিগেডের কথা শুনেছি। আপনারা তো চমকে দিয়েছেন।” একটি সূত্রের খবর, ৭-৮টি জেলা থেকে সিপিএমের কর্মীরা যোগাযোগ করেছেন সিপিএমের ক্ষয়ের কথা বলে। তাঁরা সরাসরি যুক্ত হতে চেয়েছেন এসইউসিআইয়ের সঙ্গে। আরও অনেক কিছু উঠে এসেছে সমীক্ষা রিপোর্টে। বাঁকুড়ার এক শিক্ষক জানিয়েছেন, তিনি সিপিএম কর্মী।
এসইউসিআইয়ের সম্পর্কে তাঁর ছুঁৎমার্গ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি দলের নেতাদের আচরণে ব্যথিত। মার্কসবাদ থেকে সরে গিয়ে শূন্য হয়েছে। তাতেও ঔদ্ধত্য কমেনি। এর মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি আবার জাতীয় আর রাজ্যের পার্টি লাইন নিয়ে দ্বিচারিতা করছে। তাতেই নেতৃত্বের প্রতি মোহমুক্তি হয়েছে।
এসইউসিআইকে ওই শিক্ষক নেতা সবরকম ‘সহযোগিতা’ করবেন বলে জানিয়েছেন। চমকে দিয়েছেন এক এসএফআই কর্মী। তিনি কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য। তক্কে তক্কে ছিলেন এসইউসিআই নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে। সুযোগ আসে। বাংলাদেশের বাম প্রতিনিধি দলটি ব্রিগেডের পর দিন রবিবার এলগিন রোডে নেতাজি ভবনে যায়। কাকতালীয়ভাবে ওই এসএফআই কর্মীও সেখানেই ছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের বাসটি সেখানে থামতেই এসইউসিআই নেতৃত্বের কাছে গিয়ে মনের কথা বলেন। জানান, ‘‘দলীয় নেতৃত্বের মুখের ভাষা পীড়া দিচ্ছে। তাদের মিথ্যাচার মেনে নেওয়া যায় না। যখন ডাকবেন আমি আপনাদের সঙ্গে আসব।”
আরেকটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে শহরের মেডিক্যাল কলেজের রেডিওলজি বিভাগের বামমনস্ক এক আধিকারিকের কথা। ঘনিষ্ঠ এসইউসিআই নেতাকে তিনি জানান, সংবাদমাধ্যমে নেতারা যে ভাষায় কথা বলেন, তাতে তিনি বিরক্ত। শিবদাস ঘোষের আদর্শে মার্কসবাদের পথে তিনি থাকতে চান। এনিয়ে দলের পলিট ব্যুরো নেতা অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “আমরা বামপন্থার কথাই সেদিন বলেছি। তাতে সিপিএমের গায়ে লাগছে দেখতে পাচ্ছি। কেন গায়ে লাগবে? আসলে সিপিএম বামপন্থী আন্দোলনের ক্ষতি করেছে, বামপন্থাকে মসীলিপ্ত করেছে, কলঙ্কিত করেছে। সেই জায়গা থেকে আমরা বামপন্থাকে রক্ষার জন্য লড়ে যাচ্ছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.